চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

ফাইনালে যে বিষয়গুলো ভারত-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

নয়া দিগন্ত অনলাইন
Untitled-1
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে যে বিষয়গুলো ভারত-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে | সংগৃহীত

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে আগামীকাল রোববার মাঠে নামতে যাচ্ছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় শুরু হবে এই আইসিসি ইভেন্টের ফাইনাল।

যদিও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক দেশ পাকিস্তান, তবে ভারত রাজনৈতিক কারণে পাকিস্তানে খেলতে সম্মত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজনের 'হাইব্রিড মডেল' বেছে নিয়েছে।

যেখানে ভারতের ম্যাচগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে, আর বাকি সব ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে।

এই ইস্যু নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও উঠে এসেছে ভারতের এক মাঠে পুরো টুর্নামেন্ট খেলা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বক্তব্য দিয়েছেন বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা।

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দুবাই ভ্রমণ করলো পাকিস্তান থেকে, আর ভারত পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট ভেন্যুতে খেলার জন্য দুবাই শহরে অবস্থান করছে।

তাই অন্য দলগুলোর থেকে ভারতের দলে স্পিনারদের সংখ্যা বেশি যেহেতু দুবাইয়ের মাঠ স্পিনারদের খানিকটা হলেও বাড়তি সুবিধা দেয়।

এবারের ফাইনাল হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের বৈশ্বিক আসরের সফলতম দুই দলের মধ্যে। ২০১১ সাল থেকে ভারতের মতো আইসিসি টুর্নামেন্টে ম্যাচ জয়ের রেশিও আর কোনো দলের নেই।

৮৬ ম্যাচের ৭০টিতেই জয় পেয়েছে ভারত।

আবার নিউজিল্যান্ড টেস্ট, ওয়ানডে, টি-২০ তিন ফরম্যাটেই ফাইনাল খেলছে ২০১৫ সাল থেকে। তবে ভারত ২০১৩ সালের পর থেকে নিয়মিত সেমিফাইনাল-ফাইনালে খেলেও ওয়ানডে ফরম্যাটে শিরোপা জিততে পারেনি।

আর নিউজিল্যান্ড ২০২১ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বাদে সাম্প্রতিক সময়ে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল ও একটি টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরেছে।

ভারত অবশ্য ২০২৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে।

দুই দলের স্পিনারদের লড়াই

যদিও নিউজিল্যান্ড ভারতের মতো স্পিন বোলিং-এ ঐতিহ্যগতভাবে এগিয়ে না তবুও সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ড দুর্দান্ত স্পিন বোলিং করছে।

বিশেষত এবারের অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্পিন বোলিং বিভাগের, তিনি সাদা বলের ক্রিকেটের একজন নিয়মিত পারফর্মার।

নিয়ন্ত্রিত লাইন লেন্থ এবং পরিমিতিবোধ- এটাই স্যান্টনারের বোলিং দক্ষতার মূল জায়গা।

স্যান্টনারের মূল কাজ উইকেট নেয়া না, তাই গড়টা একটু বেশি (৩৫), তিনি স্বল্প রান দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের চাপে ফেলতে পারেন সহজেই।

দলের বাকি বোলাররা এই সুযোগ নিয়ে উইকেট তুলে নেন।

যেমন বাংলাদেশের বিপক্ষে এবারের গ্রুপ-এ'র ম্যাচে মাইকেল ব্রেসওয়েলের বলে মারতে গিয়ে চার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। স্যান্টনার মূলত বাড়তি রান যাতে না বের হয় সেটা নিশ্চিত করেন।

গত পাঁচ বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সেরা বোলার স্যান্টনার, এই সময়ে ৫৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি গড়ে ওভার প্রতি ৪.৬৮ রান দিয়ে।

ফাইনালের আগে স্যান্টনারের দিকে বাড়তি নজর থাকার আরেকটা বড় কারণ তার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে খেলার অভিজ্ঞতা।

আইপিএলের সফলতম দলগুলোর একটি চেন্নাই সুপার কিংসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি, তাই ভারতের বিপক্ষে খেলার আগে স্যান্টনারের নানা বিশেষজ্ঞ মতামত ও টোটকা ভালো কাজে দেবে দলের।

স্যান্টনার ছাড়াও নিউজিল্যান্ডের হয়ে পূর্ণ দশ ওভার বল করেন মাইকেল ব্রেসওয়েল, কাজ চালানোর মতো স্পিন বোলিং করতে পারেন গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রাভিন্দ্রাও মাঝে মধ্যে বল হাতে নেন।

ওদিকে ভারত নির্দিষ্ট কোনো স্পিনারের ওপর নির্ভরশীল না, উইকেটের সুবিধা নেয়ার জন্য হার্দিক পান্ডিয়া ভারতের মূল ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলছেন।

চারজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে মাঠে নামছে ভারত যারা সবাই পূর্ণ ১০ ওভার বল করতে সক্ষম।

আকসার প্যাটেল, রাভিন্দ্রা জাদেজা, ভারুণ চক্রবর্তী ও কুলদীপ যাদব- এই চার স্পিনার নিয়ে একাদশ গড়ছে ভারত।

হার্দিক পান্ডিয়া, আকসার প্যাটেল ও রাভিন্দ্রা জাদেজা অলরাউন্ডার হওয়ায় একাদশে ভারসাম্য থাকছে দারুণ।

সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সহজ জয়ের পর অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘৬ থেকে ৭ জন কোয়ালিটি বোলার থাকলে অধিনায়কের কাজ এমনিতেই সহজ হয়ে যায়।’

ভারুণ চক্রবর্তী গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালেও খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচে ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করেছেন তিনি।

তাই ভারুণের দিকে বাড়তি নজর থাকবে ফাইনাল ম্যাচে।

ভারুণ চক্রবর্তীর বোলিং বৈচিত্র্য তাকে অন্য বোলারদের থেকে আলাদা করে তোলে, একইরকম ভঙ্গিতে বল করে তিনি বল ব্যাটারের দিকে ও ব্যাটার থেকে দূরে টার্ন করাতে সক্ষম।

ম্যাট হেনরির থাকা, না থাকা নিয়ে প্রশ্ন

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পাওয়ার পর ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ম্যাট হেনরি খেলতে পারবেন কি না এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে চলতি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চার ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়া ম্যাট হেনরি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাসেনের ক্যাচ নেয়ার সময় কাঁধে চোট পেয়েছেন।

নিউজিল্যান্ডের কোচ গেরি স্টেড হেনরির মাঠে নামা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেননি, তবে তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চিতভাবেই একটা অস্বস্তি কাজ করছে, আমরা তাকে বাদ দিয়ে চিন্তা করছি না তবে যেহেতু চোট আমাদের হাতে নেই, তাই অনেককিছু আছে যা আসলে আমরা জানি না’।

২০১৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এক ম্যাট হেনরি ভারতকে প্রথম স্পেলেই লড়াই থেকে একরকম ছিটকে দিয়েছিলেন।

ম্যানচেস্টারের সেই সেমিফাইনালে পাঁচ রানের মধ্যে লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা ও ভিরাট কোহলিকে প্যাভিলিয়নে ফেরান তিনি।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও হেনরিকে খেলতে বেশ ভুগতে হয়েছে ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটারদের।

ম্যাট হেনরি গত পাঁচ বছরে নিউজিল্যান্ডের সেরা ওয়ানডে বোলার।

অনেকটা নিউজিল্যান্ডের সাবেক ফাস্ট বোলার শেন বন্ডের মতো বোলিং অ্যাকশন, দারুণ লাইন লেন্থ এবং নতুন বলে সুইং করানোর দক্ষতা হেনরিকে ওয়ানডে ক্রিকেটের একজন উইকেট শিকারি বোলারে পরিণত করেছে।

রাচিন রাভিন্দ্রা নাকি শুভমন গিল

নিশ্চিতভাবেই রোহিত শর্মা, ভিরাট কোহলি, কেইন উইলিয়ামসন, ড্যারেল মিচেলদের মতো নামগুলোর দিকে ফাইনালে নজর থাকবে ক্রিকেট সমর্থকদের।

তবে ফাইনালের আগে আলাদা করে নজরে আসছে দুই দেশের দুই তরুণ ওপেনারের নাম, নিউজিল্যান্ডের রাচিন রাভিন্দ্রা ও ভারতের শুভমন গিল।

রাচিন রাভিন্দ্রা ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই নিজের ব্যাটিং পারদর্শিতার কারণে বারবার শিরোনামে আসছেন, বিশেষত আইসিসির মাত্র দুটি ওয়ানডে ইভেন্টে খেলেই নিউজিল্যান্ডের আইসিসি ইভেন্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক এখন তিনি।

২০২৩ বিশ্বকাপে ৩টি ও চলমান চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন রাচিন রাভিন্দ্রা।

আর রাচিনের পরিবার ভারতীয় হওয়ার কারণে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হলে এটা বাড়তি আলোচনার রসদ যোগায়।

অন্যদিকে শুভমন গিল ভারতের ক্রিকেটে নতুন পালক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। শচীন টেন্ডুলকার, ভিরাট কোহলির মতো ব্যাটারদের যোগ্য উত্তরসূরী মনে করা হচ্ছে তাকে।

গিল ও রাচিন দু’জনেরই বয়স এখন ২৫। গিল ৬০ গড় ১০০ স্ট্রাইক রেটে ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাট করছেন, রাচিনের গড় ৪৪ স্ট্রাইক রেট ১০৮।

দু’জনই উইকেটের চরিত্র অনুযায়ী খাপ খাইয়ে ব্যাট করতে এবং রান তুলতে পছন্দ করেন।

ইনিংসের শুরুতে এই দু’জনের উইকেট পাওয়ার জন্য আলাদা ছক কসবেন প্রতিপক্ষ বোলাররা।

এছাড়া কেইন উইলিয়ামসন, ভিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা- ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের তিন সেরা ব্যাটারের জন্য এই ফাইনালটা বিশেষ একটা মঞ্চ।

সূত্র : বিবিসি