রমজানের মাসআলা

যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায়

নয়া দিগন্ত অনলাইন

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান আমি নিজে দেব।’

কোরআন
সংগৃহীত

ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহারসহ বেশকিছু কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আমরা রোজা রাখি।

একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই আমরা রোজা রাখি। ইসলামের অন্য ইবাদতগুলো কাউকে দেখানোর জন্য করার ফুরসত থাকলেও রোজায় কিন্ত সেটি নেই। কারণ, আমি যদি পর্দার আড়ালে বা ঘরের দরজা বন্ধ করে খাবার খেয়ে ফেলি তাহলে কিন্তু কেউ আমাদেরকে দেখছে না। এত সুযোগ থাকার পরেও আমরা কিন্তু আড়ালে পানাহার করি না। কারণ, আমরা কষ্টকরে পানাহার থেকে বিরত থেকে রোজা রাখি একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান আমি নিজে দেব।’ আল্লাহ তায়ালা নিজে যে আমলের প্রতিদান দেবেন সেই প্রতিদান কত বড় হবে? নিশ্চয়ই কল্পনার চেয়ে বড়।

সুতরাং আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদানের আশায় এত কষ্টকরে রোজা রেখে সেই রোজা যদি নষ্ট হয়ে যায়, কবুল না হয়, তাহলে সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার কষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই অর্জন হলো না। তাই অত্যন্ত ভালোভাবে জেনে নেয়া উচিত কী কী কারণে রোজা নষ্ট হয় বা ভেঙে যায়।

নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে রোজা সম্পন্ন করতে হয়। এসব শর্ত পূরণ না হলে রোজ হয় না। ভেঙে যায়। আর কেউ যদি অযথাই নিজের ইচ্ছায় রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে তার কবিরা গুনাহ হবে।

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (শরিয়ত অনুমোদিত) কোনো কারণ ছাড়া বা রোগ ছাড়া রমজান মাসের একটি রোজা ভেঙে ফেলে, তার পুরো জীবনের রোজা দিয়েও এর ক্ষতিপূরণ হবে না। যদিও সে জীবনভর রোজা রাখে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)

যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় প্রতিবিধানের বিচারে তা দুই প্রকার

এক. যার কারণে রোজা ভেঙে যায় এবং তার প্রতিবিধান হিসেবে কাজা ও কাফফারা (ক্ষতিপূরণ) উভয়টি আদায় করতে হয়। তা হলো স্ত্রী-সম্ভোগ ও ইচ্ছাকৃত পানাহার। কেউ যদি ইচ্ছা করে রমজান মাসের দিনের বেলা স্ত্রীর সাথে সহবাস করে অথবা পানাহার করে, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। তার প্রতিবিধান হিসেবে ব্যক্তিকে রোজার কাজা ও কাফফারা করতে হবে।

দুই. যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হলে প্রতিবিধান হিসেবে শুধু কাজা করতে হয়, কাফফারা দিতে হয় না।

এমন কিছু কারণ হলো

১. ইচ্ছা করে বমি করা

২. বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা

৩. মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব

৪. ইসলাম ত্যাগ করলে

৫. গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে

৬. কুলি করার সময় অনিচ্ছায় গলার ভেতর পানি প্রবেশ করলে

৭. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে

৮. রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে

৯. রাত অবশিষ্ট আছে মনে করে সুবেহ সাদিকের পর পানাহার করলে

১০. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে

১১. মুখ ভরে বমি করলে

১২. ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরো কিছু খেলে

১৩. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে

১৪. কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে

১৫. জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে

১৬. অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে

১৭. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেওয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে

সূত্র : ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি