তাওয়াককুল বা আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বলতে কী বোঝায়

সাধারণত তাওয়াককুলের অর্থ করা হয়- কাজ না করা, কোনো উপায়-উপকরণ গ্রহণ না করা এবং কোনো ধরনের চেষ্টা-তদবির না করা। তাওয়াককুলের এসব অর্থ একেবারেই ভুল এবং চরম পর্যায়ের ভ্রান্তি।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
মসজিদ
সংগৃহীত

তাওয়াককুলের পরিচয় দেয়ার আগে তায়াককুলের যে প্রচলিত ভুল ব্যাখা আছে, তা স্পষ্ট করা জরুরি। সাধারণত তাওয়াককুলের অর্থ করা হয়- কাজ না করা, কোনো উপায়-উপকরণ গ্রহণ না করা এবং কোনো ধরনের চেষ্টা-তদবির না করা। তাওয়াককুলের এসব অর্থ একেবারেই ভুল এবং চরম পর্যায়ের ভ্রান্তি।

অথচ কোরআনে তাওয়াককুলের অর্থ করা হয়েছে সর্বোচ্চ চেষ্টা, সঠিক পরিকল্পনা এবং সময় ও অবস্থার যথাযথ ব্যবহার ইত্যাদি।

মূলত তাওয়াককুল হলো আসমান ও জমিনের আপদ থেকে রক্ষার মাধ্যম। সেই সাথে আল্লাহ তায়ালার রাজত্ব ও ক্ষমতা, খাজানা ও ধনভাণ্ডারের ওপরে আস্থা রাখা। কোরআনের ভাষায় নামাজে মানুষ আল্লাহর নিকটবর্তী হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সিজদা করো এবং স্বীয় প্রভুর নৈকট্য অর্জন করো।’-সুরা আলাক

দেখুন নামাজ হলো আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার সময়। তখনো আল্লাহ তায়ালা শুধু মৌখিক ভরসা করার পরিবর্তে উপায়-উপকরণ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। সুরা নিসার ১০২ নম্বর আয়াতে আছে, ‘হে নবী, আপনি যখন তাদের মধ্যে অবস্থান করবেন, তারপর তাদের সাথে সালাত কায়েম করবেন, তখন তাদের একদল আপনার সাথে যেন দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে।’

যুদ্ধের ময়দানে সব যোদ্ধাদের নিয়ে নামাজ পড়তে নিষেধ করা হলো। আল্লাহ নবীজিকে নির্দেশ দিলেন এক অংশ নামাজ পড়বে, আরেক অংশ সশস্ত্র পাহারায় থাকবে। অথচ এই নামাজই কিন্তু আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার সময়। তবুও আল্লাহ বিপদ থেকে বাঁচতে নবীকে উপায়-উপকরণ গ্রহণের নির্দেশ দিলেন। বোঝা গেল তাওয়াককুল মানে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা নয়, বরং সঠিক কর্মপন্থায় উত্তম উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা এবং আল্লাহ তায়ালার ওপরে ভরসা রাখা।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন হজ করত কিন্তু সাথে পাথেয় নিয়ে আসত না। আবু মাসউদ বলেন, ইয়েমেনের কতিপয় লোক হজে যেত; কিন্তু সাথে পাথেয় আনত না এবং তারা বলত যে আমরা আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করেছি। অথচ মক্কায় পৌঁছার পর তারা ভিক্ষা করত। ফলে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমরা হজের সফরে সাথে পাথেয় নিয়ে যাবে, আর জেনে রেখো, তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়।-আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৩০

সারমর্ম বোঝা গেল পৃথিবীতে যেকোনো কাজে উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা তাকওয়ার পরপিন্থী নয়। বরং আল্লাহর দেয়া আসবাব গ্রহণ করতে হবে এবং কাজটি পরিপূর্ণতা দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহর হাতে এই কথা বিশ্বাস করা এর নামই তাওয়াককুল।