যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ
জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ
বাংলাদেশের পরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান। আমেরিকায় তৈরী পোশাক রফতানিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৪১ শতাংশ। এ দিকে দেশটিতে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে চীনের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।
স্থান
ঢাকা
Printed Edition

শাহআলম নূর
আমেরিকার বাজারে দেশের তৈরী পোশাক বেশ ভালোভাবে অবস্থান তৈরি করেছে। দেশটিতে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরী পোশাক আমদানি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালের একই সময়ে তা ছিল প্রায় ৫৫ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
আমেরিকা যেসব দেশ থেকে পোশাক আমদানি করে এর মধ্যে ১০টি দেশের রফতানি চিত্র পর্যালোচনা দেখা যায়, এর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের পরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান। আমেরিকায় তৈরী পোশাক রফতানিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৪১ শতাংশ। এ দিকে দেশটিতে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে চীনের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে তাদের প্রচলিত বাজার থেকে স্থানান্তরিত হয়ে বাংলাদেশের দিকে আসছে। এতে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার তৈরি হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেল অফিসের (ওটেক্সা) প্রকাশিত এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সংকলিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্রুততম বর্ধনশীল পোশাক রফতানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কারণ উল্লেখিত সময়ে আমেরিকার বাজারে দেশের পোশাক রফতানি ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ, ভারতের ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। দেশটিতে পোশাক রফতানিতে কম্বোডিয়ার প্রবৃদ্ধি ২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং কম্বোডিয়া থেকে তাদের কাজের অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তরিত করছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন আমেরিকার ক্রেতারা তাদের পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের পোশাক শিল্পের জন্য সুসময় হাতছানি দিয়ে ডাকছে বলে তারা মনে করেন।
এ দিকে পোশাক রফতানিতে চীনের প্রবৃদ্ধি খুবই ধীরগতিতে রয়েছে। এবং হন্ডুরাসের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। আমেরিকা তাদের বিশ্বব্যাপী সোর্সিং প্যাটার্নের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাণিজ্য নীতি এবং উৎপাদন খরচ মতো কারণগুলো এই প্রবণতাগুলোকে প্রভাবিত করে চলেছে রফতানিকারকরা মনে করেছেন।
উল্লেখিত সময়ে মার্কিন পোশাক আমদানি বাজার ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ, বর্ধিত উৎপাদন ক্ষমতা এবং টেকসই নীতিগত উৎপাদন অনুশীলনের অঙ্গীকার দেশের পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।
বিজিএমইর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশের রফতানিকারকরা তাদের পণ্যে বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছেন। এ জন্য তারা গবেষণার জন্য বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছেন। এসব কারণে বিদেশী ক্রেতারা নতুন কাজের আদেশ নিয়ে আসছেন। দেশের পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত রাখতে পণ্য সরবরাহে বৈচিত্র্যকরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি জোর দেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমেরিকার বাজারে অন্যান্য প্রধান রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক চীন তার অবস্থান ধরে রেখেছে। চীনের পোশাক রফতানি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে দেশটির পোশাক রফতানি ছিল ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ উল্লেখিত সময়ে দেশটির পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। যদিও দেশটির প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল। তবে কিছু উদীয়মান প্রতিযোগীর তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম।
আমেরিকার বাজারে ভিয়েতনামও রফতানিতে ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে। দেশটির পোশাক রফতানি ১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যা মার্কিন বাজারে তার টেকসই প্রতিযোগিতামূলকতা প্রদর্শন করে।
ইন্দোনেশিয়া ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমেরিকার বাজারে দেশটির পোশাক রফতানি ৩০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে প্রাং ৪২ কোটি মর্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা দেশটিকে দ্রুততম বর্ধনশীল রফতানিকারকদের মধ্যে স্থান দিয়েছে।
এ দিকে আমেরিকার বাজারে ভারত ৪৭ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি করেছে। উল্লেখিত সময়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ দিকে যেখানে কম্বোডিয়ার রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আমেরিকাতে দেশটির পোশাক রফতানি বাণিজ্য ছিল ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার।