কানাডা মেক্সিকো চীনের সাথে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু
Printed Edition
- মার্কিন পণ্যে পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা ট্রুডোর
- ৩ মার্কিন সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ শুল্কারোপ চীনের
- ট্রাম্পের শুল্কের পাল্টা ৪ পরিকল্পনা মেক্সিকোর
- মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় পতন
কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশ দুটির সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর সময়ও শেষ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। এই ঘোষণার পরপরই মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধাক্কা লেগেছে। ট্রাম্প চলতি বছরের শুরুর দিকেই এই শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। এবার জানালেন, মঙ্গলবার থেকে এ শুল্ক বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। রয়টার্স ও বিবিসি।
এছাড়াও চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন বাণিজ্য অংশীদারই- কানাডা, মেক্সিকো ও চীন, বড় বাণিজ্য বাধার মুখে পড়তে চলেছে। এ দিকে মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি কানাডিয়ান পণ্যের ওপর প্রস্তাবিত শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে মঙ্গলবার থেকে কানাডা ১৫৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (১০৭ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের তিন সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীন। এর মধ্যে রয়েছে বায়োটেক, বিমান ও সামুদ্রিক প্রকৌশল সংস্থা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে মেক্সিকো এখনো তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি। তবে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মেক্সিকোর তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করার কথা। এ জন্য তারা চারটি ভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করেছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, মেক্সিকান পণ্য আমদানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম গত সোমবার বলেছিলেন যে, তার দেশ পাল্টা প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি ঠিক করেছে।
এর আগে সোমবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প বলেন, শুল্ক আরোপের জন্য সবকিছু প্রস্তুত আছে, আগামীকাল থেকেই কার্যকর হবে। এরপর কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি এদিন সাংবাদিকদের বলেন, একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিই- ট্রাম্প যদি শুল্ক আরোপ করেন, আমরাও প্রস্তুত। তিনি জানান, কানাডা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর ১৫৫ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে পাস্তা, পোশাক ও সুগন্ধির মতো নিত্যপণ্যের ওপর ৩০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। জোলি আরো বলেন, কানাডা বাণিজ্য যুদ্ধ চায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি এ যুদ্ধ শুরু করে, তাহলে কানাডাও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই শুল্ক আমাদের জন্য অস্তিত্বের হুমকি, হাজারো কানাডিয়ান কাজ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
মেক্সিকো ও চীনও জানিয়েছে, তারাও মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। এতে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের কারণ হলো অবৈধ মাদক ও অভিবাসনের অনিয়ন্ত্রিত প্রবাহ রোধ করা।
গত মাসে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও কানাডা ও মেক্সিকোকে এক মাস বাড়তি সময় দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হয়। ফলে এখন চীনা পণ্যের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা ও মার্কিন শিল্পকে রক্ষা করার কার্যকর হাতিয়ার হলো শুল্ক।
শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায় ক্ষতিকর হতে পারে, এই আশঙ্কাকে তিনি আমলে নেননি। এ অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা কয়েক দশক ধরে মুক্তবাণিজ্যের সুবিধা পাচ্ছেন। ট্রাম্প আরো বলেন, তারা যদি তাদের গাড়ির কারখানা ও অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে নির্মাণ করে, তাহলে তাদের কোনো শুল্ক দিতে হবে না। ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তিন শেয়ারবাজার সূচকে ধস নামে। ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ১.৪ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর পতন হয় ১.৭৫ শতাংশ এবং নাসডাকের পতন হয় ২.৬ শতাংশ।
মার্কিন পুঁজিবাজারে পতন
এ দিকে ট্রাম্পের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তিনটি সূচকে পতন হয়েছে। দিনের শেষে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক ১.৪%, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১.৭৫% এবং নাসডাক সূচক কমেছে ২.৬%।
ট্রুডোর প্রতিক্রিয়া
কানাডিয়ান সিবিসি নিউজের খবর অনুসারে গত সোমবার এক বিবৃতিতে ট্রুডো বলেন, কানাডা সরকার মঙ্গলবার থেকে ৩০ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে এবং বাকি ১২৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে। তিনি আরো বলেন, মার্কিন বাণিজ্য পদক্ষেপ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শুল্ক বহাল থাকবে। যদি মার্কিন শুল্ক বন্ধ না হয়, তাহলে আমরা বেশ কয়েকটি অ-শুল্ক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রদেশ এবং অঞ্চলগুলোর সাথে আলোচনা করছি এবং তা অব্যাহত থাকবে।
চীনের পাল্টা ব্যবস্থা
বিবিসির খবরে বলা হয়, মার্কিন সংস্থাগুলোর মধ্যে বেইজিং মার্কিন বায়োটেক সংস্থা ইলুমিনিয়াকে চিহ্নিত করে বলেছে যে, তারা ‘চীনা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণ করেছে। চীন গতকাল মঙ্গলবার থেকে ইলুমিনিয়াকে জিন সিকোয়েন্সিং মেশিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং কোম্পানিটিকে তার ‘অনির্ভরযোগ্য সত্তার তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করেছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইলুমিনিয়া চীনা সংস্থাগুলোর বৈধ অধিকারকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এ ছাড়া বেইজিংয়ের অর্থ মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের মুরগি, গম, ভুট্টা এবং তুলাসহ বেশ কিছু কৃষি আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি সয়াবিন, শূকরের মাংস, গরুর গোশত, ফল, শাকসবজি এবং দুগ্ধজাত পণ্যের মতো অন্যান্য পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্ক ১০ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১০টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে ‘অনির্ভরযোগ্যসত্তার তালিকায়’ এবং ১৫টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে রফতানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করেছে, যা গতকাল মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
মেক্সিকোর বক্তব্য
অন্য দিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শাইনবম গত সোমবার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সংযম, প্রশান্তি এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। আমাদের পরিকল্পনা এ, পরিকল্পনা বি, পরিকল্পনা সি, এমনকি পরিকল্পনা ডিও রয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সেটা কাজে লাগাব। শেইনবাউম জানান, তিনি মঙ্গলবার মেক্সিকোর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আরো কথা বলবেন।