ট্রাম্পের চাপ ও স্বাধীনতা বিতর্কের মধ্যে গ্রিনল্যান্ডে পার্লামেন্ট নির্বাচন

বিবিসি
Printed Edition

ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে পার্লামেন্ট নির্বাচন। এর আগে গ্রিনল্যান্ডের নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে এত গুরুত্ব না পেলেও এবার যেন তার ব্যতিক্রম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে, আলোচনাকে উসকে দিয়েছে ডেনমার্কের সাথে সম্পর্ক নিয়েও। ড্যানিশ-গ্রিনল্যান্ডিক নীতি বিশেষজ্ঞ নাউজা বিয়ানকো বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড আগে কখনো এতটা আলোচনার কেন্দ্রে আসেনি।’

গ্রিনল্যান্ড প্রায় ৩০০ বছর ধরে ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ১৯৫৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ডেনিশ রাজ্যের অংশ হওয়া দ্বীপটি নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখনো কোপেনহেগেন নির্ধারণ করে। এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ছয়টি দলের মধ্যে পাঁচটিই স্বাধীনতার পক্ষে, যদিও তারা আলাদা আলাদা সময়ে সেটি অর্জনের পক্ষে মত দিয়েছে।

স্থানীয় সংবাদপত্র সেরমিটসিয়াকের সম্পাদক মাসানা এগেদে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের কারণে স্বাধীনতার আলোচনা একপ্রকার তীব্র মাত্রায় পৌঁছেছে।’ গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান ও খনিজ সম্পদ আকৃষ্ট করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। ২০১৯ সালে তিনি প্রথম দ্বীপটি কেনার প্রস্তাব দেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি আবারও গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড উভয়েই প্রত্যাখ্যান করেছে।

তবে সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আমাদের গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন। একভাবে বা অন্যভাবে আমরা এটি পাবই।’ তার মন্তব্যের পর মার্কিন রাজনীতিকদের হাসি ও করতালি দেখা যায়, যার মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও ছিলেন। এই বক্তব্য গ্রিনল্যান্ডে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেদে বলেছেন, ‘আমরা সম্মানের সাথে আচরণ পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমাদের সেই সম্মান দিচ্ছেন না।’

নির্বাচনে কারা এগিয়ে?

প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেদের দল ইনুইত আতাগাতিগিত ধাপে ধাপে স্বাধীনতার পক্ষে। তিনি বলেছেন, ‘নাগরিকদের অবশ্যই নিরাপদ অনুভব করতে হবে।’ অন্য দিকে বিরোধী দল নালেরাক অবিলম্বে ডেনমার্ক থেকে বিচ্ছেদ চায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়তে চায়। দলটির নেতা পেলে ব্রোগবার্গ বলেছেন, ‘গ্রিনল্যান্ড তিন বছরের মধ্যেই ডেনমার্কের রাজতন্ত্র থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।’

নালেরাক এবার সর্বাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে এবং ডেনমার্ক-বিরোধী মনোভাব কাজে লাগিয়ে সমর্থন বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষক মার্টিন ব্রিউম মনে করেন, দলটির জনপ্রিয়তা এবার পার্লামেন্টে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। অন্য দিকে, কেন্দ্র-ডানপন্থী দল ডেমোক্রাতিত মনে করে, স্বাধীনতার আগে অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হতে হবে। দলটির প্রার্থী জাস্টাস হ্যানসেন বলেছেন, ‘আমাদের অর্থনীতি এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি।’

জনমতের অবস্থা

সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী ভবিষ্যতে স্বাধীনতার পক্ষে, তবে তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মনে করেন, স্বাধীনতা জীবনের মান কমিয়ে দিতে পারে। ৮৫ শতাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে চান না এবং প্রায় অর্ধেক মানুষ ট্রাম্পের আগ্রহকে হুমকি হিসেবে দেখছেন। কিছু গ্রিনল্যান্ডবাসী উদ্বিগ্ন যে স্বাধীনতা লাভের পর অন্য কোনো শক্তিধর দেশ এসে তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

২০০৯ সালের সেলফ-রুল অ্যাক্ট অনুযায়ী, গ্রিনল্যান্ডের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে। তবে স্বাধীনতা পেতে হলে গণভোটসহ আরো অনেক ধাপ পার হতে হবে, যা সম্পন্ন হতে ১০ থেকে ১৫ বছর লাগতে পারে বলে মনে করেন এই আইনের অন্যতম রচয়িতা কাই ক্লেইস্ট। যে-ই নির্বাচিত হোক, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৮ সালে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গ্রিনল্যান্ড স্বাধীন হয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম। নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে আজ বুধবার ভোরে।