দ্বিতীয় দিনে ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজার
দরপতনের পর জীবন বীমা ও সাধারণ বীমার বেশ কয়েকটি কোম্পানি গতকাল মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় জায়গা করে নেয়।
Printed Edition
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
দেশের পুঁজিবাজারে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক। দেশের দুই পুঁজিবাজারেই গতকাল সব ক’টি সূচকের কমবেশি উন্নতি ঘটে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচকটি দিনশেষে ৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ১ দশমিক ৭৯ ও ৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এজক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৩৫ দশমিক ১১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি রেকর্ড করা হয় যথাক্রমে ৫৩ দশমিক ১২ ও ২২ দশমিক ০৬ পয়েন্ট। গত সোমবারও দুই বাজারের সব সূচকের উন্নতি ঘটে ছিল।
সূচকের এ উন্নতির প্রভাব ছিল দিনের লেনদেনেও। দ্বিতীয় দিনের মতো সূচকের টানা উন্নতির ফলে গতকাল বাজারগুলোতে লেনদেনও কমবেশি বৃদ্ধি পায়। ঢাকা শেয়ারবাজার গতকাল মঙ্গলবার ৪১২ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৭৪ কোটি টাকা বেশি। গত সোমবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৩৩৮ কোিিট টাকা। অনুরূপভাবে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে চার কোটি টাকা থেকে ১১ কোটি টাকায় পৌঁছে লেনদেন।
আগের দিনগুলোর মতো গতকালও ঢাকা স্টকে লেনদেনের শীর্ষস্থানটি ওরিয়ন ইনফিউশনের দখলে ছিল। এ নিয়ে টানা ছয়দিন পুঁজিবাজারটির লেনদেনের শীর্ষস্থানটি দখলে রাখে ওষুধ খাতের এ কোম্পানি। গতকাল কোম্পানিটির ৬ লাখ ২২ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়, যার বাজারমূল্য ছিল ২৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২২ কোটি ২০ লাখ টাকায় ১৮ লাখ ৫ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে বিচ হ্যাচারিজ ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে লভেলো আইসক্রিম, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, লিনডে বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মা, হাক্বানি পেপার অ্যান্ড পাল্প, রবি অজিয়াটা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও শাইনপুকুর সিরামিকস।
অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে লেনদেনে এগিয়ে থাকা কোম্পানিগুলো ছিল যথাক্রমে বিচ হ্যাচারিজ, লভেলো আইসক্রিম, শেফার্ড উন্ডাস্ট্রিজ, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড, ওরিয়ন ইনফিউশন, রবি অজিয়াটা, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও শাইনপুকুর সিরামিকস।
উভয় পুঁজিবাজারেই গতকাল বেশ কিছু কোম্পানি দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে যেতে দেখা যায়। ঢাকা শেয়ারবাজারে কমপক্ষে চারটি কোম্পানির এ রকম মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। এদের মধ্যে ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে এস আলম কোল্ডরোল স্টিল উঠে আসে দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে। এ ছাড়া প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৯ দশমিক ৯৭, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ৯ দশমিক ৮২ ও সিকদার ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও সমতা লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ।
মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে। এখানে আটটি কোম্পানি উঠে আসে দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ স্থানে। এগুলোর মধ্যে লিগেসি ফুটওয়্যার ১০ শতাংশ, মেঘনা সিমেন্ট ১০ শতাংশ, সমতা লেদার ৯ দশমিক ৯২ শত্যাংশ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, ফার ইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৯ দশমিক ৮৯, সায়হাম টেক্সটাইলস ৯ দশমিক ৭০ ও ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।
দুই পুঁজিবাজারের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোম্পানির এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি বাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আস্থার প্রকাশ বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, লেনদেন ও সূচকের উন্নতির পাশাপাশি দিনের বাজার আচরণে ইতিবাচক কিছু ছিল। যেমন, দীর্ঘদিনের দরপতনের পর জীবন বীমা ও সাধারণ বীমার বেশ কয়েকটি কোম্পানি গতকাল মূল্যবৃদ্ধির তার্লিকায় জায়গা করে নেয়। এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মা ও লিন্ডে বিডির মতো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসছে। তবে বাজার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বিনিয়োগকারীদের ধৈর্যের তথা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা। এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও ট্রেডার্স এর ভূমিকা নেয়ায় ফলে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে মনে করেন তারা। এটা কাটিয়ে উঠলেই গতি ফিরে পাবে বাজার।
অপর দিকে ডিএসইতে দিনের দরপতনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল সামিট পাওয়ার। গতকাল কোম্পানিটি ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ দর হারায়। এ ছাড়া সাফকো স্পিনিং ৫ দশমিক ৯৭, প্রিমিয়ারি লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স ৫ দশমিক ৭৭, হামিদ ফেব্রিক্স ৪ দশমিক ৪৬, ন্যাশনাল ব্যাংক ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ দর হারায়। এখানে উল্লেখযোগ্য দরপতনের শিকার অন্য কোম্পানিগুলো ছিল যথাক্রমে ন্যাশনাল টি কোম্পানি, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ভিএফএস থ্রেড লি., আইএফআইসি ব্যাংক ও এলআর গ্লোবাল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
তবে সিএসইতে দিনের সর্বোচ্চ দরপতনের শিকার ছিল ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির ১০ শতাংশ দরপতন ঘটে। এ ছাড়া ঢাকা ডাইং ৮ দশমিক ১২, তুং হাই টেক্সটাইলস ৬ দশমিক ৬৬, নাহি অ্যালুমিনিয়াম ৬ দশমিক ০৬ ও বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ দরপতন ঘটে। এ তালিকায় আরো ছিল শমরিতা হাসপাতাল, সামিট পাওয়ার, এডিএন টেলিকম ও আমান কটন ফেব্রিক্স লিমিটেড।
ডিএসইতে গতকাল ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০৩টি হাওলায় মোট ১২ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় যার বাজারমূল্য ছিল ৪১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ছিল ৩৯৭টি যার মধ্যে ১৮২টির দাম বাড়ে, ১৩৮টির কমে এবং ৭৭টির দাম অপরিবর্তিত থাকে। অন্য দিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ২০৫টি কোম্পানির লেনদেন নিষ্পত্তি হয় যার মধ্যে ১০২টির দাম বাড়ে, ৬৮টির কমে এবং ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত থাকে।