সিরিয়ায় রক্তপাতের জন্য দায়ীদের বিচারের অঙ্গীকার শারার

আলাবি সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যাকারীদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা

বিবিসি
Printed Edition
inter-2
সিরিয়ায় রক্তপাতের জন্য দায়ীদের বিচারের অঙ্গীকার শারার

সঙ্ঘাত ও রক্তপাতের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করার অঙ্গীকার করেছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা।

গত কয়েক দিনে সিরিয়ার নত্নু সরকারের প্রতি অনুগত সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল-আসাদ সমর্থকদের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। লাতাকিয়া প্রদেশে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত একটি বিমানঘাঁটির কাছে হওয়া ওই সংঘর্ষে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এমন অবস্থায় সঙ্ঘাত ও রক্তপাতের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করার অঙ্গীকার করেছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা।

একইসাথে আসাদের অনুগতদেরও খুঁজে বের করার কথা জানিয়েছেন তিনি। সিরিয়ার নেতা আহমদ আল-শারা কয়েকদিন ধরে চলা সংঘর্ষের পর বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি করার সাথে জড়িত যে কাউকে জবাবদিহি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই সঙ্ঘাতে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ধর্মীয় সংখ্যালঘু আলাবি সম্প্রদায়ের শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ব্রিটেনভিত্তিক একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, গত শুক্রবার এবং শনিবার পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় আলাউইতদের লক্ষ্য করে চালানো ‘গণহত্যায়’ ৮৩০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অবশ্য বিবিসি স্বাধীনভাবে মৃতের সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি। আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় এই সহিংসতাকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে।

জাতীয় টিভিতে সম্প্রচারিত এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভাষণে সিরিয়ার নেতা আহমদ আল-শারা, যার নেতৃত্বে বিদ্রোহী যোদ্ধারা গত বছরের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করেছিল আসাদের অনুগতদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) অনুসারে, এই লড়াইয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৩১ জন সদস্য এবং আসাদের সমর্থক ২৫০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন, যার ফলে মোট মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৩১১ জনে দাঁড়িয়েছে।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আল-শারা রোববার দেয়া ওই ভাষণে বলেন, ‘আজ আমরা এই সঙ্কটময় মুহূর্তে নিজেদেরকে একটি নতুন বিপদের মুখোমুখি দেখতে পাচ্ছি। সাবেক সরকারের অবশিষ্টাংশ এবং তাদের বিদেশী সমর্থকদের দ্বারা নতুন সঙ্ঘাত উসকে দেয়ার এবং আমাদের দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যার লক্ষ্য দেশকে বিভক্ত করা এবং দেশের ঐক্য ও স্থিতিশীলতা ধ্বংস করা।’

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার পোস্ট করা ভিডিও ভাষণে শারা আরো বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে এবং প্রশ্রয় ছাড়াই সেইসব অপরাধীর জবাবদিহি করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যারা বেসামরিক নাগরিকদের রক্তপাত বা আমাদের জনগণের ক্ষতি করার সাথে জড়িত, যারা রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোকে লঙ্ঘন করেছে বা নিজস্ব লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্তৃত্বের অপব্যবহার করেছে।’ তিনি বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না এবং যাদের হাত সিরিয়ার নাগরিকদের রক্তে রঞ্জিত, তারা শিগগিরই বিচারের মুখোমুখি হবে।’

এর আগে ‘বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত এবং এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করতে’ একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠন করা হয়েছে বলে তিনি টেলিগ্রামে ঘোষণা করেন। তিনি জাতীয় ঐক্যেরও আহ্বান জানান কিন্তু উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া এবং তারতুসে তার সমর্থকদের চালানো নৃশংসতার অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। দামেস্কের একটি মসজিদ থেকে দেয়া পৃথক ভাষণে আল-শারা বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আমরা এই দেশে একসাথে থাকতে পারব।’

সিরিয়ার একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, রোববার লাতাকিয়া, জাবলা এবং বানিয়াস শহরের চারপাশে লড়াইয়ের গতি ধীর হয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার সরকারি বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলার পর সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া এবং তারতুসে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার কাছে এই হামলাকে নিরাপত্তা কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতক আক্রমণ’ বলে বর্ণনা করেছে।

হত্যাকারী কারা?

এ দিকে সিরিয়ায় এ নৃশংসতার সূত্রপাত হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। আসাদের অনুগত ব্যক্তিরা যারা অস্ত্র জমা দিতে রাজি হননি, তারা লাতাকিয়া ও জাবলেহ শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুলি ছোড়েন এবং তাদের বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেন। আসাদ বাহিনীর এক সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াথ ডাল্লাহ সিরিয়ার নতুন সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি দ্য ‘মিলিটারি কাউন্সিল ফর দ্য লিবারেশন অব সিরিয়া’ প্রতিষ্ঠা করছেন।

কোথাও কোথাও খবর পাওয়া যাচ্ছে, আসাদ বাহিনীর যেসব সাবেক সেনা কর্মকর্তা অস্ত্র জমা দেননি, তারা পাহাড়ে একজোট হয়ে একটি প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলছেন।