লোহিত সাগরে ফের হামলার হুমকি হাউছিদের
Printed Edition
নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে গাজা ছাড়ার দাবি ট্রাম্প দূতের
- বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করায় ইসরাইলের নিন্দা সৌদি ও কাতারের
- গাজায় নিহত আরো ৪ ফিলিস্তিনি
ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা গাজা উপত্যকায় খাদ্যসহায়তা সরবরাহের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য ইসরাইলের কাছে একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে এবং দাবি পূরণ না হলে জাহাজ চলাচলের ওপর আবার আক্রমণ শুরু করার অঙ্গীকার করেছে।
আলজাজিরা জানায়, ২রা মার্চ, ইসরাইল গাজায় আন্তর্জাতিক খাদ্যসহায়তা কনভয় বন্ধ করে দেয় হামাসের ওপর আরো চাপ প্রয়োগের জন্য, যারা এখনো ২৪ জন জীবিত ইসরাইলি বন্দী এবং ৩৪ জন মৃত বন্দীর লাশ ধরে রেখেছে। সাহায্য বন্ধের ফলে গাজার জনসংখ্যার ওপর প্রভাব পড়েছে। কারণ ভূখণ্ড ধ্বংসের ফলে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি আরব বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
গত সপ্তাহান্তে, ইসরাইল গাজার একমাত্র ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট দেইর এল-বালাহ-তে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, যা প্রায় ৬ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে পানি সরবরাহ করে। এই প্ল্যান্টটি জেনারেটর এবং সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু ইউটিলিটি গ্রিড সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে এর ভবিষ্যৎ (এবং স্থানীয় পানি সরবরাহ) আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হামাসের একজন মুখপাত্র খাদ্য, পানি এবং বিদ্যুৎ বন্ধ করে ইসরাইলকে ‘সম্মিলিত শাস্তি এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধাপরাধ’ করার অভিযোগ করেছেন।
ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহী গোষ্ঠী-ইরান সমর্থিত-জানুয়ারিতে লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলের ওপর আক্রমণ বন্ধ করতে সম্মত হয় যখন ইসরাইল এবং হামাস একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সাম্প্রতিক ভাঙনের পরিপ্রেক্ষিতে, হাউছিরা শুক্রবার সতর্ক করে বলেছে যে, গাজায় খাদ্য ট্রাকের প্রবেশাধিকার পুনরুদ্ধার না করলে লোহিত সাগরে আক্রমণ শিগগিরই আবার শুরু হতে পারে।
লোহিত সাগরে মার্কিন বাহিনীর সাথে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবিরাম সংঘর্ষের পর হাউছিরা পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছে এবং রাশিয়ার সরকারের সাথে নতুন সরবরাহ সম্পর্কের মাধ্যমে ইরানের সরবরাহকৃত অস্ত্রের পরিপূরক করার চেষ্টা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নবায়নের জন্য কাজ করা রাশিয়া হাউছিদের সুপারসনিক অ্যান্টিশিপ মিসাইল সরবরাহ করার জন্য আলোচনা করছে বলে জানা গেছে। এটি একটি অস্ত্র, যা সোভিয়েত ইঞ্জিনিয়াররা মার্কিন নৌবাহিনীর ধ্বংসাত্মক জাহাজগুলোতে আক্রমণ করার জন্য ডিজাইন করেছিল, যেমনটি লোহিত সাগরে হাউছি বাহিনীর সাথে লড়াই করে।
গত ১ মার্চ গাজা যুদ্ধবিরতির ৪২ দিনব্যাপী প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের ব্যাপারে প্রাথমিক সমঝোতায় যা বলা হয়েছিল তা উল্টে দিয়ে ইসরাইল নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করায় তা মেনে নেয়নি হামাস। ফলে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ এখনো শুরু করা যায়নি। কিন্তু তেলআবিব তার দাবি মেনে নিতে হামাসকে বাধ্য করার জন্য গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় হাউছি নেতা গত শুক্রবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তেলআবিবকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, চার দিনের মধ্যে গাজার প্রবেশ পথগুলো খুলে না দিলে লোহিত সাগর দিয়ে ইসরাইলের কোনো জাহাজ চলতে দেয়া হবে না। সে সময়সীমা গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।
হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে গাজা ছাড়ার দাবি ট্রাম্প দূতের
এএফপি জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সোমবার বলেছেন, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পরবর্তী পর্যায়ের বন্দিবিনিময় ও যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা দরকার। তিনি আরো বলেছেন, যদি সংগঠনটি অস্ত্র ছেড়ে দিয়ে এবং গাজা ত্যাগ করার শর্ত মেনে নেয়, তাহলে সবকিছুই আলোচনার টেবিলে থাকবে।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইল-হামাসের সাথে আলোচনার জন্য কাতারের উদ্দেশে রওনা হওয়ার এক দিন আগে উইটকফ বলেন, অস্ত্র ত্যাগ করে গাজা ছেড়ে যাওয়া ছাড়া হামাসের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।
উইটকফ আরো বলেন, যদি তারা (হামাস) চলে যায়, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিচুক্তির সব সম্ভাবনা উন্মুক্ত থাকবে এবং এটাই তাদের করতে হবে। তিনি আরো বলেন, চুক্তির পরবর্তী ধাপের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা দরকার, কারণ বন্দীদের যে অবস্থায় রাখা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য ও শোচনীয়। এই প্রক্রিয়ায় কাতারের অসাধারণ মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার প্রশংসা করে উইটকফ বলেন, মিসর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
এর আগে ইসরাইলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল-১২ জানায়, বৈঠকে এই সপ্তাহে তথাকথিত ‘উইটকফ রূপরেখা’ নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবকে সমর্থন করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর কৃতিত্ব দাবি করেনি। ওই রূপরেখার আওতায় মার্কিন-ইসরাইলি নাগরিক ইদান আলেকজান্ডারসহ ১০ জীবিত বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে, বিনিময়ে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট এক ইসরাইলি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, দেশটির আলোচক দল সোমবার দোহায় গেছে। খবরে বলা হয়েছে, প্রতিনিধিদলটি ইসরাইলের নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের এক শীর্ষ কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করায় ইসরাইলের নিন্দা সৌদি ও কাতারের
গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করায় ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, কাতার ও জর্ডান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলো। এ খবর দিয়েছে মিডল ইস্ট আই। এতে বলা হয়, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর ভাষায় নিন্দা প্রকাশ করেছে। অন্য দিকে কাতার এক বিবৃতিতে এটিকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। এ দিকে এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইল কর্তৃক আরোপিত অনাহার ও অবরোধ নীতির নিন্দা জানিয়েছে জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মুখপাত্র সুফিয়ান আল কুদাহা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করতে ইসরাইলকে বাধ্য করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গাজায় নিহত আরো ৪ ফিলিস্তিনি: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি হামলায় আরো চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও ইসরাইল প্রায় প্রতিদিনই গাজায় হামলা চালাচ্ছে এবং এতে ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। সর্বশেষ প্রাণহানির ঘটনায় অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৮ হাজার ৪৬০ ছাড়িয়ে গেছে। এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরো পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেছেন এবং তারাও প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া ইসরাইলি আক্রমণে আরো ১৬ জন আহত হয়েছেন। এর ফলে সঙ্ঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৯১৩ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।