৬ দেশে বিপুল সম্পদের সন্ধান

হাসিনা-রেহানা পরিবারের ৬৩৫ কোটি টাকা জব্দ

সংবাদ ব্রিফিংয়ে তথ্য : ১১ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পাচারের টাকা উদ্ধারে বিশেষ আইন হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
Printed Edition
Hasina-Rehana
শেখ হাসিনা (বাঁয়ে) ও শেখ রেহানা | সংগৃহীত

বিদেশে অর্থ পাচারেও পিছিয়ে ছিলেন না পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে বিপুলসম্পদের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট ও যৌথ তদন্ত দল। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকে রাশিয়ান সøাশ ফান্ড বা অবৈধ সম্পদের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে যৌথ তদন্ত দল হাসিনা পরিবারের ১২৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা জব্দ করেছে। দেশে থাকা সম্পদের মধ্যে রাজউকের ৬০ কাঠা জমি অবরুদ্ধ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২৪০ কোটি টাকা, যদিও দলিল মূল্যে দেখানো হয়েছে মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। পাশাপাশি ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমিসহ ৮টি ফ্ল্যাটও জব্দ করা হয়েছে। হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মোট ছয়টি মামলা ইতোমধ্যে দায়ের করা হয়েছে। এই ছয়টি কেসের তদন্ত সম্পাদন ও চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আর এ কারণে হাসিনা পরিবারের সাত সদস্যের আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, কোথায় কোথায় পাচার হয়েছে এবং ওইসব সম্পদের অবস্থান নিয়ে বিশেষ তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডির সমন্বয়ে বিশেষ যৌথ তদন্ত দল। প্রথমে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শেখ পরিবার, ব্যাংক ডাকাত এস আলম, এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপ, সামিট, জেমকন গ্রুপ, বসুন্ধরা, ওরিয়নসহ ১১টি বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। ওই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় হাসিনা পরিবারের দুর্নীতিলব্ধ সম্পদের এসব তথ্য জানানো হয়। বিফ্রিংয়ে উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সহকারী প্রেসসচিব সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে শিগগিরই সরকার একটা বিশেষ আইন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘পাচার করা টাকা কিভাবে আনা যায় সেটা ত্বরান্বিত করতে একটা বিশেষ আইন শিগগিরই করা হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই আইন আপনারা দেখবেন। পাচারের অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে যেসব বিদেশীরা আমাদের সাহায্য করছেন, তারাও এ ধরনের আইনের চাহিদার কথা বলছেন। সেই অনুযায়ী আইনটি করা হচ্ছে।’ প্রেসসচিব বলেন, পাচার করা টাকা উদ্ধারের জন্য প্রথম থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তৎপর ছিল। অধ্যাপক ইউনূস প্রথম থেকেই বলে আসছেন যে, এটা বাংলাদেশের মানুষের টাকা। আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভেতরে এটা থাকবে। সরকারের ফোকাস ছিল, পাচার করা টাকা কিভাবে আনা যায়। সে জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে ১১ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

শফিকুল আলম জানান, টাকা ফেরত আনার চেষ্টা কতদূর এগিয়েছে, সেটার ওপর আজ (সোমবার) একটা বড় সভা হয়। সভায় নেতৃত্ব দেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা। সেই সভায় অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, আইনি সহায়তা পেতে অনেক ল ফার্মের সাথে সরকার ও টাস্কফোর্স কথা বলছে। ল ফার্মের সাথে অ্যাগ্রিমেন্ট করতে এ আইনটা সাহায্য করবে। ২০০টা ল ফার্মের সাথে আমরা ইতোমধ্যে কথা বলেছি। তবে এখনো সিলেকশন হয়নি। একটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিলেকশন হবে। ৩০টার মতো ল ফার্মের সাথে অ্যাগ্রিমেন্টে যাবো- সেটা নিয়েও কথাবার্তা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রেসসচিব বলেন, সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- পাচার হওয়া টাকা দেশের মানুষের টাকা। যত দ্রুত করা যায়, টাকা ফেরত আনতে হবে। ঈদের পর প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে আরো একটি সভা ডেকেছেন। আশা করছি প্রতি মাসে এর ওপর একটা করে সভা হবে। তিনি বলেন, যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। সেটা কতটুকু হয়েছে? আমরা যতটুকু জেনেছি, এটা আরো বিস্তারিত জানার জন্য প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। পাচারকৃত টাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজন বিদেশে তার সন্তানের টিউশন ফি পাঠিয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। অথচ বছরে এক কোটি টাকার ওপরে টিউশন ফি লাগার কথা নয়। এখানে দেখা যাচ্ছে টিউশন ফির নামে বিদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে।’

চোখের পাতা খুলেছে ধর্ষণের শিকার শিশুটি : প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি প্রথমবারের মতো চোখের পাতা নেড়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে শিশুটির স্বাস্থ্যের আরো কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকরা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাফিজ উদ্দিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চিকিৎসকরা ডেপুটি প্রেসসচিবকে জানিয়েছেন যে শারীরিক অবস্থার খুব সামান্য উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকদের ভাষায়, ‘কমার লেবেল ৩ থেকে ৫’-এ উন্নীত হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর গতকাল সকালে শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে। শিশুটিকে শ্বাসরোধের অপচেষ্টার কারণে তার অক্সিজেন লেভেল কমে মস্তিষ্কে পানি জমেছে, যা এখনো অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। বুকের মধ্যে যে বাতাস জমে ছিল সেটি অপসারণ করা গেছে। হয়তো দু-এক দিনের মধ্যে শিশুটির স্বাস্থ্যের আরো কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকরা।

গত বৃহস্পতিবার মাগুরা শহরে ঘটনাটি ঘটে। বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়া ৮ বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন তার মা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাসুরও জানতেন। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান বলেও অভিযোগ আনা হয় এতে। ঘটনার দিন অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিক্যাল থেকে শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। গত শুক্রবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। পরে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে তাকে সিএমএইচে নেয়া হয়।