ফ্যাসিবাদবিরোধীদের সতর্কতা জরুরি

ভারত নিজের অবস্থানে অটল

Printed Edition

গত জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক নতুন বাস্তবতার উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু তা মানতে পারেনি প্রতিবেশী দেশ ভারত। ঘটনার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও দেশটির নীতি নির্ধারক, কূটনীতিক এমনকি সামরিক কর্মকর্তাদের কথাবার্তায় স্পষ্ট যে, তাদের অবস্থানের কোনো নড়চড় হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশকে সব দিক থেকে ধ্বংস করেছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার। সেটি করা হয়েছে ভারতের মদদে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে একের পর এক ভারতকে সুবিধা দেয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেখেছেন এদেশের মানুষ। দেখেছেন নির্বাচনে ভারতীয় হস্তক্ষেপ যা শুরু হয়েছিল সুজাতা সিংয়ের দূতিয়ালির মধ্য দিয়ে। পরে সামনে এসেছে দেশটির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ভাষ্য স্বয়ং তার নিজের লেখা বইতে, যেখানে তিনি ১/১১ সরকারের জেনারেল মইনকে মদদ জোগানোর ইতিবৃত্ত। এর বাইরে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য, বিবৃতিতে ভারত ও বাংলাদেশের অস্তিত্ব এক করে ফেলার নানা উদাহরণ সামনে এসেছে। ভারত কিভাবে আওয়ামী সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করেছে সেসব তথ্যও জনগণের জানতে বাকি থাকেনি। ভোটারবিহীন বা নৈশভোটের নির্বাচনে অবৈধভাবে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হাসিনাকে ভারতের কুণ্ঠাহীন সমর্থনে সেটি স্পষ্ট। কিন্তু এখন ভারত চায় বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক। গতকাল ঢাকার পত্রপত্রিকায় ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর একটি মন্তব্য ছাপা হয়েছে। তাতে তিনি স্পষ্ট করেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে তারা কোনো সম্পর্ক করবেন না। বলেছেন, নির্বাচিত সরকার আসুক, তারপর দেখা যাক সম্পর্ক কোনো দিকে যায়।

একই দিনে ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার একটি রিপোর্টের খবরও ঢাকার পত্রিকায় এসেছে। তাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের গত শুক্রবারের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। জয়সওয়াল বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সেখানে সব সমস্যার সমাধান হতে হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে।’

ভারতের নেতা ও কর্মকর্তাদের মুখে এসব কথা কতটা মানানসই সে প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক। তবে তার চেয়েও বেশি সতর্কসঙ্কেতের মতো। কারণ, দেশটি কেন এখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় সেটি এ দেশের জনগণের কাছে পরিষ্কার। ভারতের তাঁবেদার আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের জাঁতাকলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পিষ্ট হওয়া মানুষ আর ভারতের কথামত চলবে না এটা স্পষ্ট। এদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ভারতের দয়ায় ক্ষমতায় যেতে চাইলে পরিণতি হাসিনার আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো হবে না তা নিশ্চিত।

আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে সুবিধা পাওয়ার দিন ভারতের আর নেই। অবসরে যাওয়া ভারতীয় কূটনীতিক বীণা সিক্রি সম্প্রতি ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সেই অপচেষ্টা করেছেন। ডাহা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে চেয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও বলেছিলেন, ভারতের সাথে কেমন সম্পর্ক চায় সেটা বাংলাদেশকে ঠিক করতে হবে। আমরা বলতে চাই, এটা বহুবার বহুভাবে বলা হয়েছে। বুঝতে না চাইলে সেটা তাদের সমস্যা। এ সমস্যার কারণে ভুটান, মালদ্বীপসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর একটিও ভারতের মিত্র নয়।

আমরা এ দেশের স্বৈরাচারবিরোধী, দেশপ্রেমিক শক্তিকে ভারতের দ্বিচারিতা বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই।