যেভাবে জালিমের পতন ঘটে

Printed Edition

মুহাম্মদ সালমানুল হক আনাস

অযোগ্য ব্যক্তিকে যখন কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন সে দায়িত্বকে ক্ষমতা মনে করে। কারণ দায়িত্বের মাধ্যমে সে মানুষকে আদেশ দিতে পারবে। ধমক দিয়ে কথা বলতে বলতে পারবে, মানুষ তার কথা শুনবে। তাই সে নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করবে।

এসব কিছু তাকে অহঙ্কারী করে তুলে, সে মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না; বরং তার আদেশ অমান্য করলে নির্যাতন শুরু করে, কেউ তার অবাধ্য হতে পারবে না।

এভাবে করতে করতে সে মনে করে, ‘আমাকে এ ক্ষমতা ছাড়া যাবে না, কারণ আমি মানুষের উপর যা নির্যাতন করতেছি, ক্ষমতা চলে গেলে, মানুষ আমাকে রাখবে না।’

এ কথা ভেবে সে নিজেকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য তার পথের কাঁটা অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে তার ক্ষমতা চলে যেতে পারে, তাদের সে গুম খুন করে ফেলে। এসব অপকর্ম করার পর প্রকাশ হতে লাগলে তা ধামাচাপা দেয়ার জন্য কিছু লোক দেখানো ভালো কাজ করতে থাকে, যেমন- উমরাহ করা, দান করা ও দরিদ্র জনগণের মধ্যে শীতের কম্বল বিতরণ করা ইত্যাদি।

তার সাথে যারা থাকে তাদেরও স্বাধীনতা দিয়ে দেয় যেকোনো কিছু সে করতে পারবে বলে, আর সাধারণ মানুষ একটু এদিক সেদিক করলে তিলকে তাল বানিয়ে খুন পর্যন্ত করে ফেলে। তার সে পথের কাঁটাগুলো সরিয়ে ফেলার পর থেকে সে খালি মাঠে গোল দেয়ার মতো মানুষের উপর নির্মম নির্যাতন চালাতে থাকে।

সাধারণ মানুষ যাকে বলে এ জালিমের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবে, তাদের সে বহু আগে গুম খুন করে ফেলেছে। মানুষ উপায়ন্তর না পেয়ে মজলুম হয়ে জালিমের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে বিচার দেয়। এ বিষয়ে রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘মজলুমের দোয়া আল্লাহর কাছে সরাসরি পৌঁছে যায়, এর মধ্যে কোনো বাধা থাকে না।’ (তিরমিজি)

মানুষ যখন এ হাদিসের উপর আমল করে এ জালিমের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে বিচার দেয়, তখন তার দেখা যায় তার ক্ষমতা, সম্পদ ও নির্যাতন আরো বৃদ্ধি পায়।

এতে সে আগের চেয়ে অধিক নির্যাতন চালাতে থাকে। মানুষ যতই দোয়া করতে থাকে, ততই তার নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যখন এ জালিম তার জুলুমের শেষ সীমা অতিক্রম করে ফেলে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু মানুষের মনে জালিমের জুলুম থেকে বাঁচার জন্য চেতনা জাগ্রত হয়ে যায়। তারা দলবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দেয়া সেই চেতনা শক্তি দিয়ে জীবন ও গন্তব্যের অনিশ্চয়তা নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যায়, বহু প্রাণ উৎসর্গ করার পর হঠাৎ একদিন বদদোয়াকারী মজলুম এবং সংগ্রামী ব্যক্তিদের অজান্তে জালিমের পতন ঘটে যায়।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো- জালিম নিজেও জানে না, তার এমনভাবে পতন ঘটবে। এ বিষয়ে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ‘আমরা তাদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অবকাশ দিই।’ (সূরা হুদ)

এখানে সুক্ষ্ম বিষয় হলো- যখন কোনো মজলুম ব্যক্তি জালিমের জন্য বদদোয়া করে, তখন জালিমের সুখ-শান্তি আরো বৃদ্ধি পায়, যার মাধ্যমে জালিম আরো বেপরোয়া হয়ে যায়, হঠাৎ একদিন জালিমের এমনভাবে পতন ঘটে যাবে, বদদোয়া করা সেই মজলুম ব্যক্তিও কল্পনা করতে পারবে না।

কারণ এ বিষয়ে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- ‘তারাও পরিকল্পনা করে, আল্লাহও পরিকল্পনা করেন, বস্তুত আল্লাহই সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।’ (সূরা আনফাল)

লেখক : শিক্ষার্থী, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম