মানবতাবিরোধী অপরাধ

সাভারে এপিসি থেকে ফেলে ইয়ামিন হত্যা ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

চানখাঁরপুলে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্য কারাগারে

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাভারে গুলি করার পর পুলিশের সাঁজোয়া যানে তুলে সেখান থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন।

অপর দিকে চানখাঁরপুলে শাহরিয়ার খান আনাসসহ সাতজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি পুলিশ কনস্টেবল নাসিরুলকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। এ সময় প্রসিকিউটর ওমর ফারুক, তারেক আব্দুল্লাহ ও মঈনুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, কনস্টেবল নাসিরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের সাথে সে সরাসরি জড়িত। নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করেছে। থানার রেকর্ডে দেখা যায় তার নামে একটি চায়নিজ রাইফেল ও ৪০ রাউন্ড গুলি ইস্যু করা হয়েছিল। অপারেশন শেষে মাত্র ১৬ রাউন্ড গুলি ফেরত দিয়েছে। বাকিগুলো সে ছাত্র-জনতার ওপর ছুড়েছে। তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করেছিলেন। আজ পুলিশ তাকে গ্রেফতারের পর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২২ এপ্রিল।

গাজী এম এইচ তামিম বলেন, সাভারে গুলির পর পুলিশের সাঁজোয়া যানে তুলে সেখান থেকে রাস্তায় ফেলে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নাম রয়েছে। গ্রেফতারের স্বার্থে তদের নাম প্রকাশ করা হয়নি বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৮ মে পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর সাভারে গুলির পর পুলিশের সাঁজোয়া যানে তুলে সেখান থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়। চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে এ অভিযোগ দাখিল করেন নিহতের মামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুন কাদির। তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন শাকিল আহমাদ।

এ আইনজীবীর অভিযোগ, গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে। তারা শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে ধরে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে নিয়ে বেলা দেড়টার দিকে বুকের বাম পাশে গুলি করে। গুলিতে ইয়ামিনের বুকের বাম পাশে অসংখ্য স্পি­ন্টার বিদ্ধ হয়।

এ অবস্থায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ইয়ামিনকে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের উপরে ফেলে রেখে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য গাড়িটি এপাশ থেকে ওপাশ প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ইয়ামিনকে প্রায় মৃত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেন এবং সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্যকে বের করে তাকে পুনরায় গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই পুলিশ সদস্য ইয়ামিনকে মৃত ভেবে গুলি না করে রাস্তার উপরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেন। গুলিবিদ্ধ শাইখ ইয়ামিনকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচণ্ড কষ্টে নিশ্বাস নিতে তখনো দেখা যায়। এ অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা ধরাধরি করে উঁচু রোড ডিভাইডারের এক পাশ থেকে আরেক পাশে ছুড়ে ফেলে দেন। পরে তাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খুলনায় চার শতাধিক গুলিবিদ্ধ নাঈম শিকদারের অভিযোগ : খুলনা এলাকায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আহত ভিকটিম নাঈম শিকদার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছেন। গতকাল ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলাল, তালুকদার আব্দুল খালেক, শেখ তন্ময়, হাবিবুন নাহারসহ ১২১ জনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, নাঈম শিকদার একজন গুলিবিদ্ধ ভিক্টিম। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। তার শরীরে এখনো চার শতাধিক গুলি আছে। তার পিঠে একটি বড় গুলি লেগেছিল যা অনেক অনুরোধের পর এনেস্থেসিয়া ছাড়াই একজন ডাক্তার বের করে দেন।