উৎসের উচ্চারণ
খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে ...
Printed Edition
আল্লাহর রবুবিয়্যতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস মানুষকে তার উপার্জনের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়। তিনি আল্লাহর প্রতিশ্রুতির প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন। তাঁর প্রতিশ্রুতি হলো যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য পথ বের করে দেন। আল্লাহ তার জন্য এমন জায়গা থেকে রিজিক প্রদান করবেন যেখানে কারো কল্পনাও পৌঁছায় না। আল্লাহর ওপর ভরসাকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। সে উপার্জনের জন্য কোনো অন্যায্য পথকে প্রশ্রয় দেয় না মোটেও
আমাকে কে খুন করতে পারে, প্রেম ছাড়া? কিন্তু প্রেমের হাতে নিহত হলে আমি তো মরে যাই না। জীবনের নতুন অর্থে প্রবেশ করি। মৃত্যু আমাকে মারতে পারে না, এটা তো চূড়ান্ত। মরণের মারণে মরে না মানুষ। সে স্থানান্তরিত হয় মাত্র। এক জগৎ থেকে আরেক জগতে যায়। কিন্তু যে জগতেই যাক, মানুষের আত্মা তিয়াসী পরমের জন্য, সে তিয়াস নিহিত আছে প্রেমে।
বিচার-বুদ্ধি, যুক্তি ও প্রজ্ঞার সব বয়ান আমরা শুনি। তারা আমাদের পথ দেখায়। মশালের মতো। জ্যোতির মতো। তারা বলে এই দেখো সত্য এবং এগিয়ে যাও। কিন্তু সত্যের যে পথ, তার মর্মমূলে নিহিত আছে প্রেম। সুফিরা বলেন, প্রেম দুই রকম-
১. বাহ্যিক বা দৈহিক প্রেম : (ইশকে সুরি ও যাহেরি) : এর মানে হচ্ছে যা কিছু দৃশ্যত ও বাহ্যত আকর্ষণীয়, সুন্দর তার প্রতি মুগ্ধ টান, আকর্ষণ।
২. অভ্যন্তরীণ বা প্রকৃত প্রেম (ইশকে বাতেনি ও হাকিকি) : যেহেতু যা কিছু সুন্দর তা-ই আল্লাহ তায়ালার জামাল ও কামালের (সৌন্দর্য ও পূর্ণতার) তাজাল্লি (বিকিরণ), সেহেতু বাহ্যিক প্রেম অতিক্রম করে প্রকৃত প্রেমের স্তরে উপনীত হওয়া সম্ভব।
প্রেম হচ্ছে আধ্যাত্মিক তৎপরতার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সত্তাকে বিশোধনের একটি পদ্ধতি। হৃদয় বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন হবার পর আল্লাহ তায়ালার নূর গ্রহণ করার জন্য উপযুক্ত হয়।
হৃদয় যখন এমন একটি আয়নায় পরিণত হয় যাতে আল্লাহ তায়ালার কুদরতের বহিঃপ্রকাশগুলো (মাযাহের) প্রতিফলিত হয়, তখন তাতে প্রকৃত বাস্তবতা তথা সত্য মুদ্রিত হয়ে যায় এবং তাতে সুস্পষ্ট হাকিকতে প্রবেশ করে মানুষ। সে নিজের মধ্যে আল্লাহর রহস্যগুলোকে আবিষ্কার করে এবং তার সাথে সম্পর্কসূত্রকে জীবন্ত করে। এই সম্পর্কসূত্র হচ্ছে মানবেসত্তার চিরায়ত আমানত।
মহাকবি হাফিজ বলেছিলেন ‘যে আমানতের বোঝা আসমান বহন করতে পারেনি তার ব্যাপারে ভাগ্য পরীক্ষার লটারিতে আমার মতো পাগলের নাম উঠল। হ্যাঁ, মানুষই এই নিখিলে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব, আনুগত্য ও দায়িত্বের আমানত বহন করছে। এর বহিরাঙ্গনে আছে শরিয়ার শৃঙ্খলা, ভেতরে আছে জাগ্রত খোদাপ্রেম।
খোদার ভালোবাসার ভাবাবেগ যখন মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়, তখন চিন্তা ও কর্মের সব শাখা-প্রশাখা তারই রঙে রঙিন হয়ে যায়। জীবনের কোনো গলি বা গোপন কোণও তার আওতার বাইরে থাকে না। কিছু দিকের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে।
(১) খোদায়ি ভালোবাসার সবচেয়ে গভীর প্রভাব মানুষের জীবনে কেন্দ্রিকতা সৃষ্টি করে। এই কেন্দ্রিকতা রবুবিয়্যত (প্রতিপালন) ব্যবস্থার একটি মহিমা এবং খোদার ওয়াহদানিয়্যত বা একত্বের ওপর নিখুঁত বিশ্বাসের একটি অপরিহার্য ফলাফল। শিরক মানুষের চিন্তা ও কর্মের কেন্দ্রিকতাকে ধ্বংস করে। অতএব, এর চেয়ে গুরুতর কোনো মানবীয় পাপ হতে পারে না। এরপর যে জিনিস সেই কেন্দ্রিকতাকে সুগঠিত করে, ঈমানের আসল মহিমা, অটুট করে এবং প্রকৃত অর্থে উজ্জীবিত করে, তা হলো মোহাব্বত ও ভালোবাসা।
(২) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সত্যিকার ভালোবাসার সম্পর্ক রাখে, সে সর্বদা নিজেকে তার সান্নিধ্যের অনুভবের মধ্যে আবিষ্কার করে। খোদার উপস্থিতির নিশ্চয়তা এমনভাবে হয়, যেন পরমকে তিনি নিজের চোখে দেখছেন। কবি ও সুফি মীর খুরদ (রহ:) হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া সম্পর্কে লিখেছেন যে, তিনি এই মনোভাব নিয়ে আল্লাহর দিকে অভিমুখী থাকতেন যেন তিনি তাঁকে দেখছেন। যখন একজন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে এইভাবে অনুভব করতে শুরু করে, তখন তার জীবনে সব পাপ রুদ্ধ হয়ে যায়। সে পাপ করতে সক্ষমই থাকে না, ‘বিচার দিবসের মালিকের’ দরবার সর্বদা তার চোখের সামনে থাকে। তিনি তার প্রিয়তমের উপস্থিতির অনুভবে এতটাই নিমজ্জিত হয়ে যান যে, পাপ করার ফুরসতই তার মেলে না। হজরত শেখ আলী হুজবিরী (রহ:) লিখেন, কেবল আল্লাহ দেখছেন এই জাগ্রত চেতনা মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে। (কাশফুল মাহজুব, পৃ: ১০)
যখন একজন ব্যক্তি নিশ্চিতভাবে জানবে যে, খোদা তাকে দেখছেন, তখন তিনি কখনোই সে কাজ করবেন না, যা খোদার সামনে তাকে লজ্জিত করবে, অপরাধী করবে।
(৩) আল্লাহর প্রেম যখন সম্পূর্ণরূপে প্রাধান্য পায়, তখন তাতে মানুষের ওপর পার্থিবতার আধিপত্য থাকে না । তা কমতে কমতে মানুষের চোখে স্বর্ণ এবং পাথর বরাবর হয়ে যায়। (দেখুন হুজ্জাতুল্লাহ আল-বালিগা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৮) জড় জগতের আকর্ষণ তার জন্য অকার্যকর হয়ে ওঠে। হজরত জুনাইদ আল-বাগদাদি (রহ:) একরাতে আবদার করেন যে, হে আল্লাহ আপনি আমাকে বলে দিন বেহেশতের মধ্যে আমার বন্ধু ও সঙ্গী কে হবেন? আওয়াজ এলো, ওমুক রাখাল তোমার সঙ্গী। জুনাইদ বাগদাদি (রহ:) সেই রাখালের সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং কয়েক দিন ধরে তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার পর জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়েন, এ ছাড়া এমন কোনো কাজ করেন না। তাহলে কিসের দ্বারা এত উচ্চস্থান অর্জন করলেন? সম্ভবত এই উচ্চ অবস্থান অধিকার করেছেন কোনো বাতেনি গুণের কারণে। রাখাল বলল, খাজা জুনায়েদ! আমি একজন অজ্ঞ মানুষ। কৃতিত্ব কাকে বলে আর বাতেন কী জিনিস, আমি জানি না। তবে আমার দু’টি গুণ আছে। একটি হলো আল্লাহ যদি এসব পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করেন এবং সেগুলোর মালিক আমি হই, তাতে উল্লসিত হবো না। সেগুলো যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, তাতে ব্যথিত হবো না। দ্বিতীয়টি হলো কেউ আমার প্রতি রাগ করলে মনে করি এর পেছনে আছে আল্লাহর ইরাদা বা ইচ্ছা। দয়া করলেও মনে করি তা আসলে আল্লাহর তরফে ঘটেছে। প্রতিটি ব্যাপারকে আমি এভাবেই দেখি। (আল মাজালিস, কলমি নোসখা, মজলিসে হাফতুম, উর্দু অনুবাদ, পৃ:- ২৭) মানুষের উপলব্ধি জগতের এসব মাত্রা খোদায়ি ভালোবাসা থেকে উদ্ভূত হয়।
(৪) আল্লাহর ভালোবাসা এমন এক পর্যায়ে যায় যেখানে সুফি মনে করেন, ‘আমি আমার তাবৎ বিষয়কর্ম আমার রবের কাছে অর্পণ করেছি, তিনি চাইলে আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন, চাইলে জীবন ছিনিয়ে নিন। তিনি যেমনটি চান, আমি ঠিক তাতেই খুশি। এমনতরো উপলব্ধি মানুষের মধ্যে তাওয়াক্কুল ও ইসতিগনার এক অদ্ভুত অবস্থা তৈরি করে। দুনিয়ার জাঁকজমক, ধন-দৌলতের জন্য সে মোটেও পেরেশান থাকে না, বলে আল্লাহ কি তার বান্দাহর জন্য যথেষ্ট নয়?
আল্লাহর রবুবিয়্যতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস মানুষকে তার উপার্জনের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়। তিনি আল্লাহর প্রতিশ্রুতির প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন। তাঁর প্রতিশ্রুতি হলো যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য পথ বের করে দেন। আল্লাহ তার জন্য এমন জায়গা থেকে রিজিক প্রদান করবেন যেখানে কারো কল্পনাও পৌঁছায় না। আল্লাহর ওপর ভরসাকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। সে উপার্জনের জন্য কোনো অন্যায্য পথকে প্রশ্রয় দেয় না মোটেও।
মানুষের চরিত্রের বিকাশ ও গঠনে, তার আয়-উপার্জনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উপার্জনের পথসন্ধানে মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুল করে। কোনো পার্থিব শক্তির মুখাপেক্ষিতা তার চরিত্রে অত্যন্ত মারাত্মক প্রভাব ফেলে। খোদাপ্রেম তা থেকে উত্তরণ দেয়। তামিরে খুদি বা ‘আত্ম-নির্মাণ’ ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ না একজন ব্যক্তি তার সব ঈমানি প্রত্যয়ের সাথে মহান আল্লাহকে তার জীবিকা নির্বাহী হিসেবে গ্রহণ করবে না।
সারকথা হলো, মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা জাগ্রত হলে তার জীবনের ধরন পাল্টে যায়। চিন্তা ও কর্মের সমুন্নতি ঘটে, সৃষ্টির সেবা, ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যতার মতো অসংখ্য গুণাবলি, এই আবেগের নদীস্রোতে তরঙ্গিত হয়।
আপনি প্রেমের পথে যাত্রা করবেন। হৃদয়ের দিকে দৃষ্টি দিন। আসেন, ইরাদাকে (ইচ্ছা) পবিত্র করি। পবিত্রতাকে আহরণ করি ঈমান থেকে। ঈমান আমাদের নিয়ে যাবে ইতিবাচক বা সৎ জীবন-যাপন, নিশ্চিন্ততা ও অন্তরের প্রশান্তির দিকে। ইরাদার (ইচ্ছা) বিশুদ্ধতা অর্জনের প্রাথমিক পর্যায়ে যখন আছেন, আপনি হলেন ‘মুরিদ’ (ইচ্ছাকারী), সুফিরা মুরিদকে বলেন শিষ্য। আপনার এবার চাই একাগ্রতা ও দৃঢ়তা। যা আত্মদমনে আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই যে আপনার পাপপ্রবণ নফস (নফসে আম্মারা), তাকে নিজের প্রশান্ত নফসের (নফসে মুতমায়িন্না) অনুগত করার দীর্ঘ পথে আপনি এখন অভিযাত্রী। এই যাত্রাপথে লক্ষ্যপূর্ণ করতে হলে তিনটি আধ্যাত্মিক এলাকা পাড়ি দিতে হবে। অর্জন করতে হবে তিন স্তর। সেগুলো হচ্ছে-
১. তাখলিয়াহ্ : মানে ‘খালি করা’; পারিভাষিক অর্থে শরীরকে সব প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করার জন্য নিজেকে প্রবৃত্তির কামনা বাসনা ও ঝোঁকপ্রবণতা থেকে মুক্ত করা।
২. তাহলিয়াহ্ : মানে ‘অলঙ্কার দ্বারা সুসজ্জিতকরণ’; পারিভাষিক অর্থ ব্যক্তির নাফসকে উন্নত নৈতিক গুণাবলি দ্বারা ভূষিতকরণ।
৩. তাজলিয়াহ্ : মানে ‘আলোকোদ্ভাসিত হওয়া’; পারিভাষিক অর্থ ঐশী সত্তায় নিমজ্জিত হওয়া অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা এক এবং অদ্বিতীয় এবং তিনি ভিন্ন আর কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই- এ সত্যের যথার্থ স্বীকারোক্তির লক্ষ্যে স্বীয় আমিত্বকে পরিত্যাগ করা।
আমিত্বকে পরিহার করার মধ্য দিয়ে আপনি খোদাপ্রেমের বিশেষ সীমানায় প্রবেশ করলেন। আপনি প্রেমের হাত ধরেছেন। সে আপনাকে কত সাগর, মরুভূমি পার হবার দিশা দেবে। সাতটি উপত্যকা পাড়ি দিতে হবে প্রেমের পথে। কোনোটাই সহজ নয় আদৌ। সেগুলোর দিকে তাকান।
১. তালাব (আকাক্সক্ষা ও সন্ধান) : প্রেমিকের মধ্যে জ্বলন্ত থাকবে না পাওয়ার বেদনা ও প্রতীক্ষার অনুভূতি। তার অন্তর হবে ব্যাকুল, উদগ্রীব, অদৃশ্যজগতের জন্য আকুল আকাক্সক্ষী। সে সর্বত্র প্রিয়তমের সন্ধান করে। সন্ধানের এই পর্বে হৃদয়কে দক্ষ করা চাই।
২. ইশক (প্রেম) প্রেমিকের উদগ্রীব প্রতীক্ষা ও ঐকান্তিকতা হৃদয়ে তৈরি করছে জ্বালা ও জ্বলন। সুমিষ্ট অনুভূতি মধুময় করছে চিত্তকে। বিরহের বেদনা দগ্ধ করছে হৃদয়কে। প্রিয়তমের সাথে মিলনের তীব্র আকাক্সক্ষায় ও বিচ্ছেদের আগুনের মাঝখানে প্রেমিক আবর্তিত। প্রিয়তমের সন্ধানে কোনো চেষ্টা থেকেই প্রেমিক বিরত থাকবেন না। তার চেষ্টাগুলোকে পথ দেখাচ্ছে শরিয়ত।
৩. ইরফান : শরিয়ত অনুযায়ী আমলে আছেন প্রেমিক, তরিকতের পথ পাড়ি দিচ্ছেন। অন্তরে আসমানি ইলমের নূর চমকাবে। এই নূর নিয়ে আসবে সত্য উপলব্ধি। তা বাড়বে, বাড়তে থাকবে। আবার জোয়ার-ভাটাও চলতে থাকবে। প্রেমিক উপলব্ধি করবেন মহাবিশ্বে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো শক্তির অস্তিত্ব নেই। আত্ম-উপলব্ধির বিকাশ ও স্বচ্ছতা উদযাপন করবেন। আল্লাহকে উপলব্ধি করার স্তরে উপনীত হবেন এবং সর্বত্র খোদায়ি নিদর্শন দেখবেন।
৪. ইসতিগনা (মুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্তি) : এবার প্রেমিক কেবলই আল্লাহর দিকে, কেবলই তার সমীপে। আল্লাহ্ ছাড়া সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। হৃদয় কেবলই তাঁর দিকে থাকবে। আর কোথাও নয়, আর কোথাও নয়।
৫. তাওহিদ : প্রেমিক এবার অনুভব করবেন মর্মরহস্য। তার হৃদয়ে পরম প্রভুর তাওহিদ যেন সুস্থির, বাকমুখর। রহস্যের মর্মবাণী ও তাওহিদের শিখা নিজের হৃদয়ে জ্বলতে দেখবেন তিনি ।
৬. হায়রাহ্ (দিশেহারা অবস্থা) : প্রেমিক এবার সর্বশক্তিমান ও মহামহিম আল্লাহ তায়ালার সীমা-পরিসীমাহীন মহিমার সামনে দিশেহারা ও হতবুদ্ধি অবস্থায় নিমজ্জিত। অনবরত এক বিস্ময় থেকে আরেক বিস্ময়ে হারিয়ে যেতে থাকবেন। এক তরঙ্গ থেকে আবর্তিত হবেন আরো অধিক তরঙ্গে।
৭. ফাকর ওয়া ফানা (দারিদ্র্য ও আত্মবিনয়) : প্রেমিকের বোধে এবার কোনো বহুত্ব নেই। জগতের কোথাও নেই। কারণ সবকিছুই একত্বের শৃঙ্খলা। বহুত্ব একত্বের মাঝে বিলুপ্ত। নানা চরিত্রের ঢেউ, কিন্তু তারা সমুদ্রের সত্তায় বিলুপ্ত। প্রেমিক নিজেও বিলুপ্ত। কখনো নিজেকে হারান, কখনো ফিরে পান। প্রেমের দশায় তিনি এতই প্রগাঢ়, প্রখর, প্রবল ও প্রদীপ্ত, যার মাত্রাগুলোকে জাহির করার জন্য ভাষা অক্ষম হয়ে গেছে। খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে প্রেমিক বেহুঁশ বটে, কিন্তু এই বেহুঁশির ভেতরে দুনিয়ার সব হুঁশিয়ারের হুঁশকে অতিক্রম করে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে, অনেক ঊর্ধ্বে...
লেখক : কবি, গবেষক