পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন হাইজ্যাক, ২০ সৈন্য নিহত ৫০০ যাত্রী জিম্মি

Printed Edition

নয়া দিগন্ত ডেস্ক

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা। সেখানে সামরিক কর্মকর্তাসহ ১৮২ জনকে জিম্মি করেছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। গতকাল বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় গোলাগুলিতে ২০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বা পুলিশ যদি জিম্মিদের বাঁচাতে কোনো ধরনের অভিযান চালায় তাহলে সব জিম্মিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে গোষ্ঠিটি।

বেলুচিস্তানের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশোয়ারগামী ‘জাফর এক্সপ্রেস’ ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনটিতে সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি পুলিশ এবং আইএসআইয়ের সদস্যরাও ছিলেন। স্বাধীনতাকামী সংগঠন বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি এ হামলার দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, তারা নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করেছে।

রেলওয়ের কন্ট্রোলার মোহাম্মদ কাশিফ জানান, নয়টি বগির ট্রেনটিতে অন্তত ৫০০ জন যাত্রী রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, একটি টানেলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ট্রেনটি থামিয়ে দেয়। যাত্রী ও রেলওয়ে স্টাফদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। সিবির সীমান্তবর্তী এলাকার এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ট্রেনটি একটি টানেলের ঠিক আগে আটকে রয়েছে। ট্রেনটির চারপাশে পাহাড়বেষ্টিত। এটি একটি পাহাড়ি অঞ্চল, যেখানে স্বাধীনতাকামীদের ঘাঁটি তৈরি করা সহজ এবং হামলার পরিকল্পনা করা সম্ভব।

প্রাদেশিক সরকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স ও নিরাপত্তাবাহিনী পাঠানো হয়েছে। কোয়েটা সিভিল হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র ডা: ওয়াসিম বেগ জানিয়েছেন, সব চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, নার্স এবং প্যারামেডিক স্টাফদের হাসপাতালে ডেকে পাঠানো হয়েছে। বেলুচ সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ স্বীকার করেছেন, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় উদ্ধারকাজে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। তবে বেলুচ সরকার সব সংস্থাকে সক্রিয় থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।

হামলায় এখন পর্যন্ত হতাহত হওয়ার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বেলুচ সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে হামলার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, যেসব পশু নিরীহ যাত্রীদের গুলি করেছে, তারা কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য না। সিন্ধু সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়াউল হাসান লাঞ্জার এক বিবৃতিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী শক্তির ঘৃণ্য পরিকল্পনা কখনোই সফল হতে দেয়া হবে না। সিন্ধু সরকার বেলুচিস্তান সরকারের পাশে রয়েছে।

বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ও সন্ত্রাসবাদ : বেলুচিস্তান দশকব্যাপী স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল, যেখানে বিদ্রোহীরা সরকার, সেনাবাহিনী এবং চীনা স্বার্থের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে। বেলুচিস্তানের বড় স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর মধ্যে বেলুচ লিবারেশন আর্মি সবচেয়ে শক্তিশালী। বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজসম্পদ নিয়ে পাকিস্তান সরকারের সাথে স্বাধীনতাকামী এ সংগঠনটির বিরোধ চলছে। বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে তারা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে।