কিডনি রোগের প্রকটতা
সবারই সচেতনতা দরকার
Printed Edition
মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি। দেশে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবু কিডনি রোগীর প্রকৃত সংখ্যা কত তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। দেশে কিডনি রোগের চিকিৎসা অপ্রতুল। এ কারণে কিডনি রোগের চিকিৎসা নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে। তার ওপর এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
অনুমান করা হয়, দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ হয় অসংক্রামক ব্যাধি তথা কিডনি ফেইলিওর, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা যায় কিডনি বিকল হয়ে। দেশে বর্তমানে তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। প্রতি বছর ৪০ হাজার মানুষ ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন এবং এক সময় কিডনি বিকল হয়ে মারা যান।
কিডনির রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিডনি বিকল হলে তার দুই ধরনের চিকিৎসা। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা এবং কিডনি প্রতিস্থাপন। প্রতিবার ডায়ালাইসিসে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। সপ্তাহে অন্তত দুবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেও দীর্ঘদিন ডায়ালাইসিস চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। অন্যদিকে কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো কিডনি পাওয়া। তেমনি এককালীন খরচও অনেক বেশি। এসব কারণে সাধারণ মানুষের একাংশের মধ্যে দেশে কিডনি রোগের চিকিৎসা নিয়ে সংশয় কাজ করে। অনেকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে চান। যে কয়টি রোগের চিকিৎসায় দেশের মানুষ বেশি বাইরে যান, কিডনির রোগ তার মধ্যে অন্যতম।
কিডনির রোগ নিয়ে জাতীয়ভাবে কোনো জরিপ বা গবেষণা নেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইএইচএমইর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষের কোনো না কোনো কিডনির রোগ দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় কিডনিতে পাথরের সমস্যা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, কিডনির রোগের অন্যতম প্রধান কারণ টাইপ-২ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিসজনিত দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগে ভুগছেন ২০ লাখ ৪৪ সহস্রাধিক মানুষ। উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনির রোগে ভুগছেন তিন লাখ ৮৯ হাজার মানুষ। আবার কিডনিতে ক্যান্সার আছে এমন রোগী চার হাজার ৭১৬ জন।
দেশে ব্যাপক হারে মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। একসময় বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগী কিডনির জটিলতায় ভোগেন। এতে করে দেশে আগের চেয়ে কিডনি রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। মূলত দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকায় অসংক্রামক রোগ-শোক বাড়ছে। আর এ সব শনাক্ত হচ্ছে শেষ পর্যায়ে গিয়ে। ফলে এক দিকে যেমন রোগ নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে, তেমনি চিকিৎসাব্যয় বেশির ভাগ মানুষের সামর্থ্যরে আওতার বাইরে চলে যায়।
চিকিৎসকদের মতো আমরাও মনে করি, কিডনি রোগের বিষয়ে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। সেই সাথে মানুষকে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। এতে করে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে আসবে। সেই সাথে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সচেতন হলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।