ধর্ষণ নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ
দরকার উচিত শাস্তি
Printed Edition
ধর্ষণ একটি ব্যাধি। প্রতিটি সমাজে এ ব্যাধি রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে আইন বিধিব্যবস্থা এর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের দেশে কঠোর আইন রয়েছে। এর সঠিক প্রয়োগ হলে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন কমে আসার কথা। বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান বলছে, সমাজে এ অপরাধ সমান্তরাল ধারায় চলেছে। কিছু ক্ষেত্রে এসব কঠোর আইনের অপপ্রয়োগও হচ্ছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে নারীরা বিচার না পেলেও এ আইনের অপব্যবহার করে নির্দোষকে ফাঁসানো হচ্ছে এমন বহু উদাহরণ আছে। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ইস্যু প্রতিবাদ বিক্ষোভের উপলক্ষ হয়ে বছর বছর আমাদের সামনে আসে; এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
সম্প্রতি মাগুরায় এক শিশুকে পাশবিকভাবে ধর্ষণ করা হয়। এতে আট বছরের শিশুটি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। চার দিনেও তার জ্ঞান ফিরেনি। ঘটনার পর প্রতিবাদ বিক্ষোভের ঝড় উঠেছে। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচে) নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে সে চিকিৎসাধীন। এ বিক্ষোভের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আরো বেশ কয়েকটি শিশু ধর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। চকোলেটের লোভ দেখিয়ে ডেকে নিয়ে কিংবা কোচিংয়ে একা পেয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। আবার দুর্বল মানসিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। অবস্থা এমন যে, সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। স্বামীকে জামিন করিয়ে দেয়া হবে এ বলে ডেকে এনে একটি ঘরে আটকিয়ে উপর্যুপরি কয়েক দিন ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়। গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এসব ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের কাউকে আটক করা হয়েছে। কাউকে আটক করতে তার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।
প্রতিবাদ বিক্ষোভের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে এটি আলোচনা হয়েছে। ধর্ষণের তদন্ত ও বিচারের সময় অর্ধেকে কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন এবং ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নিয়ম করা হচ্ছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে যাতে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায়; সে জন্য ডিএনএ সনদের পরিবর্তে শুধু চিকিৎসা সনদ দিয়ে তদন্ত ও বিচারকাজ চালানো যায় কি না তা বিবেচনা করা হচ্ছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় নারী-শিশু ধর্ষণ নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। তখন সরকার উপস্থিত কিছু তৎপরতা দেখিয়েছে। পরে দেখা গেছে, কোনো ধরনের কার্যকর পরিবর্তন হয়নি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের অভিযোগে গড়ে ১২টি মামলা হয়েছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতেও ঠিক গড়ে দিনে ১২টি মামলা রেকর্ড হতে দেখা গেছে। নারী-শিশু নির্যাতনসংক্রান্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আমরা এক ধরনের গড় চিত্র পাব। কার্যত পরিস্থিতির কোনো অগ্রগতি আসলে নেই।
বিচারব্যবস্থায় নানা স্তরে অনিয়ম দুর্নীতি ও অসাধু মানুষের সংশ্রবে ভুক্তভোগীরা বিচার পান না। এ কারণে অপরাধীরাও একই অপরাধ পুনরায় করতে ভয় পায় না, নতুন অপরাধীও এতে যুক্ত হয়। নারী-শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন কমাতে আমাদের বিচারব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। এটি এখনো দৃশ্যমান হয়নি।