জনগণের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোকে কথা বলতে হবে : তারেক
Printed Edition
বিশেষ সংবাদদাতা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আজকে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শুটিং ক্লাবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আমরা জনগণকে ঘিরে রাজনীতি করি। সুতরাং আজকে দেশের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। সেজন্য জনগণের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে। কিন্তু আমরা গণতন্ত্র ও একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে সবাই একমত। যেখানে মানুষের কথা বলার অধিকার থাকবে।
তিনি বলেন, দেশের বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে সংস্কার। বিশেষ করে আমরা ছোট, বড়, মাঝারি সব রাজনৈতিক দল মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও একটি সুন্দর পরিবেশের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। প্রায় সব দল মিলে জাতির সামনে আড়াই বছর আগে ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি, যখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলেননি। অবশ্যই সংস্কারের প্রয়োজন আছে। এসব নিয়ে আলোচনা থাকবেই। বাংলাদেশে এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের পরিবর্তে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হলে কী কী হবে এসব নিয়ে আলোচনা আছে। একজন ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নিয়ে কথা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়ে কথা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করা। আজকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষ কষ্ট-যন্ত্রণায় রয়েছে। তো রাজনীতিকরা কেন এসব বিষয়ে বেশি বেশি ডিবেট করছে না যে, আমি কিভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা সাজাবো? উৎপাদন কিভাবে বাড়ানো হবে? কেন এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। জাতির সামনে এসব নিয়েও কথা বলা উচিত। শুধু সংস্কার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা এসব নিয়ে আলোচনা হলেই চলবে না। কোন দল ক্ষমতায় এলে কিভাবে সমস্যার সমাধান করবে, সেটাও তুলে ধরতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, প্রায় ২০ কোটি মানুষের দেশে চিকিৎসাব্যবস্থা কী হবে? বাজারব্যবস্থা কী হবে? এসব নিয়ে কথা বলার নামও তো সংস্কার। শুধু কি নির্বাচনের সময় জাতীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বললেই সংস্কার? যাতে মানুষ মিনিমাম চিকিৎসা সুবিধা পায় সেটিও ভাবতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক শিক্ষা দিতে হলে একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। এ বিষয়েও ডিবেট বা কর্মপরিকল্পনা থাকা উচিত প্রত্যেকটি দলের। শিক্ষাব্যবস্থাকে কিভাবে দেখতে চাই; সেটিও সংস্কারের অংশ।
তিনি বলেন, আমাদের কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। ২০ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে হলে এটা করতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খাল খননের মাধ্যমে কৃষক যে জমিতে এক ফসল হতো সেখানে দু’বার ফসল ফলিয়েছেন। যেখানে দু’বার ফসল হতো সেখানে তিনবার ফসল ফলিয়েছেন। বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। তিনি কৃষকের মেরুদণ্ড ধীরে ধীরে মজবুত করেছিলেন। এটিও তো অনেক বড় সংস্কার। আমাদের শিল্পোন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। কিভাবে উদ্যোক্তাদের নিরাপত্তা দেয়া যায় সে বিষয়েও চিন্তা করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করাও কিন্তু অনেক বড় সংস্কার।
তারেক রহমান বলেন, আমি বহু বছর ধরে দেশের বাইরে। ঢাকা শহরসহ সারা দেশে পরিবেশ দূষণ তীব্রতর হচ্ছে। পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো এসব নিয়ে কি প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারি না? কিভাবে উন্নতি ঘটাতে পারি? দূষণ কমাতে পারি। আমি তো মনে করি এ দূষণ কমানোও সংস্কারের অংশ।
এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক এবং পেশাজীবী প্রতিনিধিরা।