জামায়াত আমিরের সাথে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইলামের বৈঠক

Printed Edition
1st-3
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের সাথে গতকাল সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি. মাইলাম ও সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন ড্যানিলোভিচ বৈঠক করেন : নয়া দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের সাথে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি. মাইলাম ও সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন ড্যানিলোভিচ। গতকাল সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের।

দলটির নেতারা জানিয়েছেন, সাক্ষাৎকারটি অত্যন্ত আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাক্ষাৎকালে তারা পারস্পরিক কুশলবিনিময় করেন। এ সময় বাংলাদেশে বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন ও মানবাধিকারসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন স্বার্থসংর্শ্লিষ্ট বিষয়ে তারা খোলামেলা আলোচনা করেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান পারস্পরিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, রমজান মাস শ্রেষ্ঠ মাস। এ মোবারক মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করেছেন, যা বিশ্ব মানবতার মুক্তির মহাসনদ। তাই এ মাসে বরকতকে কাজে লাগিয়ে সবাইকে আত্মগঠন ও তাকওয়া অর্জনে ব্রতী হতে হবে। তিনি মাহে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

গতকাল রাজধানীর ইব্রাহীমপুরে মনিপুর স্কুল মিলনায়তনে কাফরুল থানা দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। থানা আমির অধ্যাপক আনোয়ারুল করিমের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি আবু নাহিদের পরিচালনায় ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা ও সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য লস্কর মুহাম্মদ তাসলিম, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য শহিদুল্লাহ, শাহ আলম তুহিন, জসিম উদ্দিন, নাজমুল হাসান খান প্রমুখ।

বীণা সিক্রির বক্তব্যের প্রতিবাদ : ভারতের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক বীণা সিক্রি সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে যেসব ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মন্তব্য করেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ভারতের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক বীণা সিক্রি সম্প্রতি ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনে প্রকাশিত একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে যেসব ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মন্তব্য করেছেন আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তিনি যেসব মন্তব্য করেছেন তার মধ্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। তার বক্তব্যগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। তার বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তিনি ‘জামায়াতে ইসলামী আইএসআইর বাহক ছিল এবং দলটি (জামায়াত) পাকিস্তানের প্রভাবের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে’ মর্মে যে মন্তব্য করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। তার এ মন্তব্যের সাথে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার হীনউদ্দেশ্যই তিনি উপরে উল্লেখিত বিভ্রান্তির মন্তব্য করেছেন। তিনি ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সংবিধানকে সর্বোচ্চ দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না এবং ইসলামী ছাত্রশিবির অস্ত্র লুট করেছিল ও এসব অস্ত্র এখনো ব্যক্তিগত হাতে রয়েছে’ মর্মে যেসব ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও কাল্পনিক মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। তার ওই ভিত্তিহীন মিথ্যা মন্তব্যের জবাবে আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১৯৭৯ সালে জন্মের পর থেকেই বাংলাদেশের সংবিধান মেনে এ দেশে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকপন্থায় রাজনীতি করছে। জামায়তের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বাংলাদেশের সংবিধান মেনে মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখনো জামায়াত দেশের সংবিধান মেনেই রাজনীতি করছে। এ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে, বীণা সিক্রি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্যের জবাবে আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা কোনো থানার অগ্নিসংযোগ করে অস্ত্র লুট করেনি। কাজেই তাদের হাতে অস্ত্র থাকার প্রশ্নই আসে না।

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, কোনো একটি দেশের রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম ও তৎপরতা সম্পর্কে ফ্যাসিবাদের দোসরদের মতো একই ভাষায় কথা বলা এবং ভিত্তিহীন ও অসত্য মন্তব্য করা অপর একটি দেশের কোনো কূটনীতিকের সমীচীন নয় বলে আমরা মনে করি। আমি আশা করি ভারতের সাবেক কূটনীতিক বীণা সিক্রি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে ভিত্তিহীন মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকবেন এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে ভিত্তিহীন মিথ্যা বানোয়াট মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন।

ঝিনাইদহে নারীদের ওপর হামলার নিন্দা : ঝিনাইদহের মহেশপুরে জামায়াতের নারী নেত্রীদের ওপর বিএনপির সন্ত্রাসীদের হামলার ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতের নারী নেত্রীদের ওপর বিএনপির সন্ত্রাসীদের এ ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা গত বছরের ৫ আগস্টের পূর্বের আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের সন্ত্রাসী তাণ্ডবকেও হার মানিয়েছে। দেশবাসীর সদয় অবগতির জন্য আমি উল্লেখ করছি, রোববার সকাল ১০টার দিকে মহেশপুর উপজেলা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের কুল্লোপাড়া গ্রামের খাইরুল ইসলামের বাড়িতে স্থানীয় নারীদের নিয়ে বিশ্ব নারী দিবসের আলোচনা সভা করছিল। এ সময় ওই এলাকার বিএনপির সন্ত্রাসী আল আমিন, ঝুমুর, সাহেব, সোহেল ও আশরাফুল হাতুড়ি, কাঁচি ও বাঁশের লাঠি নিয়ে জামায়াতের মহিলা নেত্রী হাসিনা খাতুনসহ মহিলাদের ওপর হামলা করে এবং খারাপ ভাষায় তাদের গালিগালাজ করতে থাকে। তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে তারা সালেহা বেগমকে বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ ছাড়া আসামিরা হাসিনা খাতুনকে খাইরুল ইসলামের বাড়ি থেকে ধাক্কা মারতে মারতে রাস্তার ওপর এনে বাম কানে দুইটি চড় মারে। এ ছাড়া আল আমিন, সাহেব ও সোহেল হাসিনা খাতুনের শরীরের থাকা ওড়না টান দিয়ে শ্লীতাহানি ঘটায় এবং মাথা আলগা করে রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে রাখে। এর কিছুক্ষণ পর তারা হুমকি-ধমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। বিএনপির সন্ত্রাসীদের ন্যক্কারজনক হামলা ও নারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান জামায়াত সেক্রেটারি।