দৃষ্টিপাত : মব সন্ত্রাসের দৌরাত্ম্য বন্ধ করুন
Printed Edition
মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছছে যে, এ মুহূর্তে নিমন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এই সেদিন বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটি পলাতক দল দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত আগের মতোই রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি দেশে একটি সংস্কার খুবই প্রয়োজনের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়নি বলে দাবি করেন। ধানমন্ডি ৩২-সহ সারা দেশে অনেক ভবন, মাজার, বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মব সন্ত্রাস ও দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, পুলিশ সময় নিচ্ছে। তারা প্রস্তুত হতে সময় নিচ্ছে, তাদের মানসিকতা থেকে তারা এখনো মুক্ত হতে পারেনি। তবে এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিতে না পারলে ভবিষ্যতে দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ না থাকার সম্ভাবনা বেশি- বিষয়টি সরকারকে গভীরভাবে ভেবে দেখার আকুতি জানাব।
গণমাধ্যমের নিউজে দেখেছি, স্থানীয় বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে একদল লোক এইচ টি ইমামের ছেলের ২০ বছর আগের ডিভোর্সি স্ত্রীর গুলশানের বাসায় জোরপূর্বক ঢুকে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ওই বাসায় অবৈধ অস্ত্র ও বিপুল নগদ অর্থ লুকানোর কথা বলে তল্লাশির নামে লুটপাট করা হয়েছে। পরদিনই ‘মবের আক্রমণের’ সময় ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতে দুই বিদেশী নাগরিককে অযথা ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাতে দেশের জনগণ উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত না হয়ে পারছে না। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারা দেশে এ ধরনের হামলা, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। বাড়িঘরে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে দেশের মানুষ। যাত্রাপথে এক রিকশাচালক বলে উঠলেন, স্যার কোন দেশে এসে পড়লাম। দেশের বাড়িতে গরু-ছাগল, পুকুরের মাছ জোর করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
পুলিশের কাছে কোনো বিচার নেই, তারাও আতঙ্কে আছে। এরপর চলছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইকারীর নামে গণপিটুনি। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মব ভায়োলেন্সকারীদের দমনে সরকারের ব্যর্থতার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর জনগণের ক্ষোভ দিন দিন বেড়েই চলছে। টঙ্গী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পণপিটুনিতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু অমানবিক। সমাজ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য পুলিশ ও সরকারের ব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের আস্থাহীনতার ঘাটতি রয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর এক ধরনের ঢিলেঢালা দায়িত্ব বোধের কারণে দেশে দিন দিন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে। মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে যেহেতু বিচার নেই বলে। বাংলাদেশের এ ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এত অবনতি বা মব সংস্কৃতি এর আগে গড়ে উঠেতে দেখেনি।
উল্লেখ্য দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন ও টিআইবিসহ আরো অনেক বিভিন্ন সংগঠন। অথচ এত কিছুর পরও দেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বৈরাচার সরকারের মন্ত্রীর সুরে বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। বাংলাদেশে প্রতিদিন কোনো না কোনো হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, ঘরবাড়ি-মাজার ভাঙচুর, লুটপাট, রাহাজানি ও সড়ক আটকিয়ে গণহারে বাসে ডাকাতির মতো মারাত্মক অপরাধের ঘটনা ঘটছে যা নিয়ে পত্র-পত্রিকা, গণমাধ্যম ও টিভি টকশোগুলো যথেষ্ট সোচ্চার।
আশা করি, সরকার আগামীতে রাজধানীর গুলশানে সংঘটিত মব ভায়োলেন্সের মতো ঘটনা দেশের আর কোথাও হতে দেবে না। ছাত্র-জনতার নামে এ ধরনের লুণ্ঠনকারী বা কিভাবে বাসাবাড়ির গেটের দরজা ভেঙে তল্লাশির নামে জোরপূর্বক প্রবেশ করে লুটপাটের অধিকার তাদেরকে কে দিয়েছে? সরকারকে এ বিষয়গুলো অবহেলার চোখে দেখলে চলবে না।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট