ফ্যাসিবাদবিরোধীদের সম্মানে ইফতার
এনসিপি বাংলাদেশের শাসনকাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন চায় : নাহিদ
Printed Edition

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা আমাদের নিজেদের লক্ষ্য আদর্শ নিয়ে জনগণের কাছে যাবো, আমাদের মধ্যে নীতিগত বিরোধ হবে কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের যে ঐক্যের জায়গা তৈরি করেছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে, আমরা সেই ঐক্যের জায়গা থেকে কখনোই সরে যাবো না। জাতীয় নাগরিক কমিটি বাংলাদেশের শাসনকাঠামোর পরিবর্তন চায়। শাসনকাঠামোর মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চায়। তাই আমরা একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে একটি নতুন রিপাবলিকের কথা বলছি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে জাতীয় নাগরিক পার্টি আয়োজিত ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিক, ছাত্র-শ্রমিক, পেশাজীবী, অ্যাক্টিভিস্ট, ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করে একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে একটি নতুন রিপাবলিকের কথা বলছি। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির স্বপ্ন গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। যারা ফ্যাসিবাদী ছিল তাদের দ্রুত বিচার আমাদের সবারই প্রত্যাশা। দৃশ্যমান বিচারকার্যক্রম আমরা দেখতে চাই। বিচারের মাধ্যমেই আমরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা করতে চাই। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ ৫ আগস্টেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি আমরা বলতে চাই, বর্তমান সরকার যে সংস্কারকার্যক্রম পরিচালনা করছে ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে, তাদের যে প্রস্তাবিত জুলাই সনদ সেটি আমরা দ্রুত কার্যকর দেখতে চাই। সেক্ষেত্রে আমরা সবাই সবার জায়গা থেকে সহযোগিতা করব।
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, জুলাই সনদ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের সংস্কারের রূপরেখা আরো স্পষ্ট হবে। আমরা চাই সংবিধান সংস্কারের কার্যক্রম ছাড়া আরো যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকার্যক্রম আছে যেমন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ইত্যাদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েই অধ্যাদেশের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে। আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, সামনের নির্বাচনে একইকসাথে আইনসভা এবং গণপরিষদ নির্বাচন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে আমরা নতুন একটি গণতন্ত্র প্রবর্তন করতে পারব।
ইফতার মাহফিলে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যে, বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটেছে। নতুন রাজনীতিতে চাঁদাবাজদের স্থান হবে না, হানাহানি-টেন্ডারবাজি চলবে না। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী যত শক্তি আছে সবাই এক হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে। আমাদের রাজনৈতিক মিশন-লক্ষ্য আলাদা হতে পারে। তবে আমরা এটা বলতে পারি যে, আমরা আজ এখানে যারা আছি, সবাই ফ্যাসিবাদবিরোধী পক্ষ। বাংলাদেশে যারা জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবাইকে এক হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
সংগঠনটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা একটা দীর্ঘ লড়াই করে এসেছি। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। নিপীড়ন, গুম, খুন হত্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে আমরা সবাই মিলিত হতে পেরেছি। এই রমজানের ইফতারের মধ্য দিয়ে সবাই বিভেদ দূর করে ঐক্য গড়ে তুলতে পারবে বলে আমরা প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
নাগরিক পার্টি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন দলের মুখ্য সমন্বয়কারী নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম প্রমুখ। এ ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক নেতা, অ্যাক্টিভিস্ট, ওলামায়ে কেরাম, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।