বেঞ্চ থেকে ব্যালট : কীভাবে দুর্নীতিবাজ শাসক নির্বাচনী ফলকে অবয়ব দিয়েছে

এফআইআর দায়েরের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে, তবু মামলাটি এগিয়ে নিতে পুলিশ এখনো কিছুই করেনি। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক এবং অন্য তিন বিচারপতির রায় থেকে অভিযোগ এতটা স্পষ্ট যে, আর কোনো প্রমাণ বা তদন্তের প্রয়োজন নেই। তা সত্ত্বেও পুলিশ সময় ক্ষেপণ করে চলেছে। জামিন নিতে ব্যর্থ হয়ে তিনি এখন বিচার থেকে পালিয়ে আছেন। যদিও এফআইআরে তাকে ২০২৫ সালের জুলাই ও আগস্টে ছাত্রদের মৃত্যুর সাথে সরাসরি যুক্ত করা হয়নি, তবে তার বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতারণামূলক কারসাজি আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায়ন করে, তিনটি জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজনের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করে। রায়টি শুধু তাদের ক্ষমতায় থাকা সহজ করেনি; বরং তারা যে নৃশংসতা করেছে তারও সুযোগ করে দেয়। বেআইনি শাসনের বিচার বিভাগীয় স্থপতিদের জবাবদিহি এবং বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি দীর্ঘ দিনের কাক্সিক্ষত একটি বিষয়

২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, আপিল বিভাগের চার বিচারক এমন একটি যুগান্তকারী রায় প্রকাশ করেন, যা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিকে নতুন অবয়ব দেবে। তাদের রায় সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, কার্যকরভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ভেঙে দেয় যা আগে সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধান করে আসছিল। সিদ্ধান্তটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন পরিচালনা করতে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনি ভিত্তি হয়ে ওঠে, দলটিকে সাড়ে ১৫ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম করে। এ রায়ের পরিণতি ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়, যখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণে শত শত ছাত্র-জনতা প্রাণ হারায়। যার আইনি শেকড় ছিল এ রায়ের মধ্যে। রায়ের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি রিভিউ পিটিশন আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকায় এর আইনি যোগ্যতা সম্পর্কে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকব। চারজন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক তাদের সিদ্ধান্তে কোন পরিস্থিতিতে ও পদ্ধতিতে পৌঁছেছিলেন তা এ নিবন্ধে পর্যালোচনা করব।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, এম সলিম উল্লাহ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। তিনি যুক্তি দেখান, এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে। মামলাটি শেষ পর্যন্ত ২০০৪ সালে বিগত বিএনপি সরকারের আমলে বিচারপতি মো: জয়নুল আবেদীন, বিচারপতি মো: আওলাদ আলী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানির সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম, যিনি ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ও সাংবিধানিক বলে যুক্তি দেন। শুধু আবেদনকারী এম সলিম উল্লাহ এবং তার আইনি দল সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম আই ফারুকী ও অ্যাডভোকেট মোহসেন রশিদ এই সংশোধনীকে অসাংবিধানিক বলে দাবি করেন। অন্যান্য আইনজীবী যারা বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন; তারা সংশোধনীর বৈধতা সমর্থন করেন। ৪ আগস্ট, ২০০৪-এ, হাইকোর্ট বিভাগ একটি সর্বসম্মত রায় দেন, যেখানে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ এবং এটি সংবিধান লঙ্ঘন করেনি।

আবেদনকারী এম সলিম উল্লাহ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। তবে, তার মৃত্যুর পর আব্দুল মান্নান খানকে মামলায় পিটিশনকারী হিসেবে প্রতিস্থাপিত করা হয়। আট সিনিয়র আইনজীবী এমিকাস কিউরি হিসেবে হাজির হন। তারা হলেন টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, ড. এম জহির, এম আমিরুল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি। এমিকাস কিউরির মধ্যে সাতজন ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা সমর্থন করেন। শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি বিরুদ্ধে কথা বলেন।

আপিলের শুনানির পর, আপিল বিভাগ ১০ মে, ২০১২ শুধু একজন বিচারকের সংখ্যাগরিষ্ঠতার দ্বারা হাইকোর্ট বিভাগের রায় বাতিল করে রায় দেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। একই দিনে, আপিল বিভাগ একটি সংক্ষিপ্ত আদেশ জারি করেন, যাতে বলা হয় ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে, কারণ এটি সংবিধানের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণে, সংক্ষিপ্ত আদেশটি পরবর্তী দু’টি সংসদীয় নির্বাচন (দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধানের অধীনে পরিচালিত হওয়ার অনুমতি দেয়। সিদ্ধান্তটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এতে নিশ্চিত করা হয়, এ নির্বাচনগুলো একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে রক্ষা করতে পারে। আর আওয়ামী লীগ সরকারের সম্ভাব্য অব্যাহত শাসন রোধ করতে পারে।

সংক্ষিপ্ত আদেশ জারির আগে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে ২১ জুলাই ২০১০ তারিখে ১৫ সদস্যের একটি বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে মূলত আওয়ামী লীগের প্রাধান্য ছিল, এর ১৫ সদস্যের ১২ জন ছিলেন এ দলের সিনিয়র নেতা। আলোচনার সময়, কমিটি সাবেক রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা এবং সুশীলসমাজের সদস্যসহ ১০৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করে। বিস্তৃত আলোচনার পর, কমিটি ২৯ মার্চ ২০১১ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে এর ভূমিকা স্বীকার করে সর্বসম্মতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বজায় রাখার সুপারিশ করে। তবে, ৩০ মে ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকের পর কমিটির অবস্থান নাটকীয় মোড় নেয়। বৈঠকে শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে দেন; তিনি আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ধারাবাহিকতা সমর্থন করেন না। এ আলোচনার পরপর সংসদীয় কমিটি আগের অবস্থান থেকে সরে আসে। ২০ জুন ২০১১ সালে সংসদীয় কমিটি শেখ হাসিনার নির্দেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করে।

৩ জুলাই ২০১১ সালে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুসারে, সংসদ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন আইন, ২০১১ পাস করে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। ফলস্বরূপ ১০ মে ২০১১ সালে আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত আদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার অনুমতি দেয়া সত্ত্বেও পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিধানটি সম্পূর্ণরূপে অপসারণের মাধ্যমে নিশ্চিত করে যে, ভবিষ্যৎ সব নির্বাচন একটি ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। আরো তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এ পরিবর্তন নিশ্চিত করে ২০১৪ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন তত্ত্বাবধানে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী প্রশাসন ছাড়াই কার্যকরভাবে আগের আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় থাকার অনুমতি দেবে।

শেখ হাসিনার নির্দেশে সংসদীয় কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করে। তার ইচ্ছানুযায়ী সংসদ পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করেছে এমনটি দেখার পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকও প্রধানমন্ত্রীর সাথে একাত্ম হতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। একটি অভূতপূর্ব এবং আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ পদক্ষেপে তিনি তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করেন, যা মূলত ১০ মে, ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত সংক্ষিপ্ত আদেশে প্রতিফলিত হয়েছিল।

এ মামলার সম্পূর্ণ ও বিস্তারিত রায় ১৬ মাস পরে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়, যেটি মূল শর্ট অর্ডার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব রেফারেন্স তাতে মুছে ফেলা হয়। ততদিনে অবসরে যাওয়া বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের প্রকাশ করা রায়ে বলা হয় : ‘সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবার ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের বিবেচনা অনুসারে, যুক্তিসঙ্গত সময় পূর্বে, যথা ৪২ দিন পূর্বে, সংসদ ভাঙ্গিয়া দেয়া বাঞ্ছনীয় হইবে তবে নির্বাচন পরবর্তী নতুন মন্ত্রিসভা কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভা সংক্ষিপ্ত আকার গ্রহণ করত: উক্ত সময়ের জন্য রাষ্ট্রের স্বাভাবিক ও সাধারণ কার্যক্রম পরিচালনা করিবে।’

এটি কার্যকরভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যেকোনো সম্ভাবনা দূর করে দেয়। অনেকে এটিকে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার পক্ষে বিচার বিভাগীয় নথিতে হেরফেরের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেন। আগের সংক্ষিপ্ত আদেশের বিপরীতে জ্ঞাতসারে একটি রায় দিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক নিশ্চিত করেন, নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে হবে। এ রায় সমর্থনকারী তিন বিচারপতি হলেনÑ বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন, এস কে সিনহা ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। স্মরণযোগ্য, তিনজনই পরে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। বিপরীতে, তিন বিচারপতি এম এ ওয়াহহাব মিয়া, নাজমুন আরা সুলতানা ও মো: ইমান আলী সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের বিরোধিতা করেন। তাদের কাউকে পরে আর প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, বিচারপতি এম এ ওয়াহহাব মিঞাকে ডিঙিয়ে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতির পদে নিয়োগ দেয়ার পর বিচারপতি ওয়াহাব পদত্যাগ করেন। একইভাবে, বিচারপতি মো: ইমান আলীকে ডিঙিয়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে প্রধান বিচারপতি করা হলে বিচারপতি ইমান ছুটিতে চলে যান। তিনি সুপ্রিম কোর্টে ফিরে আসেননি।

শেখ হাসিনা সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করেন। তিনি তার প্রতি এতটা সন্তুষ্ট ছিলেন, তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারক হিসেবে বসাতে মনোনীত করেছিলেন। তবে, সুশীলসমাজ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সক্রিয় বিরোধিতায় ২৯ জুলাই ২০২০ তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ সরকার।

যদিও ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত রায়ের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কিন্তু এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনা সরকার ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন করতে সক্ষম হয়। বিচারপতি খায়রুল হকের রায় আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন ক্ষমতায় অনিয়ন্ত্রিত দখলের বৈধতা দিয়েছিল।

এত কিছুর পর, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ১৮ আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো: মুজাহেদুল ইসলাম বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন। তাতে নিম্নলিখিত অভিযোগগুলো করা হয় :

‘উল্লেখ্য যে, ১০ মে ২০১১ তারিখের সংক্ষিপ্ত আদেশে বিধি মোতাবেক তৎকালীন আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতি স্বাক্ষর করেন। কিন্তু আসামি এ বি এম খায়রুল হক তার অবসরের পরে ওই সংক্ষিপ্ত আদেশের মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ অংশ বেআইনিভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে এবং প্রতারণামূলকভাবে করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত আদেশের মৌলিক অংশ পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রতিফলিত হয়নি এবং যা রায় পরিবর্তনের শামিল। যা আইনত জাল, সত্য ডকুমেন্ট প্রস্তুতির জন্য পরিবর্তন করার সুযোগ নেই, এটি দণ্ডবিধি ৪৬৬ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

এফআইআরটি ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পুলিশ গ্রহণ করে। কিন্তু পুলিশ অফিসার সঙ্কটে ৯ দিন পরে ২৭ আগস্ট ২০২৪-এ সেটি রেকর্ড করা হয়। এটি রেকর্ড করা হয় বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ধারা ২১৯ ও ৪৬৬ অনুসারে। দণ্ডবিধির ২১৯ ধারার অধীনে, যদি কোনো বিচারক বেআইনি জেনেও দুর্নীতির মাধ্যমে একটি রায় ঘোষণা করেন; তাহলে ওই অপরাধে বিচারক সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। ধারা ৪৬৬-এর অধীনে একজন ব্যক্তিকে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের মাধ্যমে বিচারিক রেকর্ড কারসাজির জন্য শাস্তি দেয়া যেতে পারে। এভাবে, এফআইআরে অভিযুক্ত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং তার সাথে একমত হওয়া বিচারপতিদের সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

এফআইআর দায়েরের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে, তবু মামলাটি এগিয়ে নিতে পুলিশ এখনো কিছুই করেনি। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক এবং অন্য তিন বিচারপতির রায় থেকে অভিযোগ এতটা স্পষ্ট যে, আর কোনো প্রমাণ বা তদন্তের প্রয়োজন নেই। তা সত্ত্বেও পুলিশ সময় ক্ষেপণ করে চলেছে। জামিন নিতে ব্যর্থ হয়ে তিনি এখন বিচার থেকে পালিয়ে আছেন। যদিও এফআইআরে তাকে ২০২৫ সালের জুলাই ও আগস্টে ছাত্রদের মৃত্যুর সাথে সরাসরি যুক্ত করা হয়নি, তবে তার বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতারণামূলক কারসাজি আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায়ন করে, তিনটি জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজনের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করে। রায়টি শুধু তাদের ক্ষমতায় থাকা সহজ করেনি; বরং তারা যে নৃশংসতা করেছে তারও সুযোগ করে দেয়। বেআইনি শাসনের বিচার বিভাগীয় স্থপতিদের জবাবদিহি এবং বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি দীর্ঘ দিনের কাক্সিক্ষত একটি বিষয়।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নিবন্ধিত কৌঁসুলি