আব্দুল্লাহ আল নোমান

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুুল্লাহ আল নোমান ইন্তেকাল করেছেন। ধানমন্ডির বাসায় ভোর ৬টায় ইন্তেকাল করেন তিনি।

Mizan Kariim pic

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুুল্লাহ আল নোমান ইন্তেকাল করেছেন। ধানমন্ডির বাসায় ভোর ৬টায় ইন্তেকাল করেন তিনি। একই দিন মারা যান চট্টগ্রামের বাসিন্দা, দিগন্ত টিভির ক্যামেরা পারসন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সদস্য নাসিরুল আলম। দিগন্ত টিভি খুব তাড়াতাড়ি আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু নাসিরুল আলম আর ফিরবেন না। তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। সবাই কাজে যোগ দেবেন, শুধু নাসিরুল আলম ছাড়া। একই দিন ইন্তেকাল করেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার ও চলচ্চিত্র বিষয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক জাহিদুর রহমান অঞ্জন। পরে তার লাশ কর্মক্ষেত্র স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে নেয়া হয়। সেখানে তার প্রতি সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা গভীর শ্রদ্ধা জানান, পুষ্পমাল্য দিয়ে ও সূরা ফাতিহা পাঠ করে। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে এর আগেও চলচ্চিত্রকার মতিন রহমানসহ প্রথিতযশা ব্যক্তিরা শিক্ষকতা করেছেন।

বলছিলাম আব্দুল্লাহ আল নোমানের কথা। পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে এবং জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তার দুই দফায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার হেলিকপ্টারযোগে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। শুক্রবার বাদ জুমা চট্টগ্রামের জামিয়াতুল ফালাহ ময়দানে তার তৃতীয় দফা জানাজা হয়েছে। সর্বশেষ জানাজা তার নিজ এলাকা চট্টগ্রামের রাউজানে গহিরা হাইস্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে নোমান সাহেবের ছেলে ইউডি ইউনিভার্সিটির পরিচালক সাইদ নোমান হাজির হন। তিনি তরুণ ও কর্মঠ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজ হাতে পরিচালনা করছেন। এই প্রতিষ্ঠানে পরিচালনার পেছনে আব্দুল্লাহ আল নোমানেরও অবদান ছিল। প্রতিষ্ঠানটি বেশ সুনাম অর্জন করেছে। আব্দুল্লাহ আল নোমানের প্রথম নাম শুনি ১৯৬৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তিনি তখন কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম নেতা। তিনি ফেনীতে ডাক্তারপাড়ায় গিয়েছিলেন বক্তৃতা করতে। সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীও ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম নেতা ছিলেন। আমাদের ডাক্তারপাড়ায় অর্থাৎ শহরের পশ্চিম অংশে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন এনায়েত উল্লাহ চৌধুরী ফরহাদ (বর্তমানে অ্যাডভোকেট) এবং সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল মিল্লাত বেলাল। রাজনৈতিক সমাবেশগুলো হতো মহকুমার শিক্ষা অফিসের কাছে ডাক্তারপাড়ার মাঠে। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী জাফর আহমদ থাকলেও স্থানীয় অনেকা নেতা ছিলেন। আমরা তখন স্কুলের ছাত্র। আব্দুল্লাহ আল নোমানকে দেখি প্রথম চট্টগ্রামে। তার বাসার কাছে দেওয়ানবাজারে রিকশায় করে যাচ্ছিলেন। তখন লারেলাপ্পা মার্কা একটা গান রেকর্ডে সজোরে বাজছিল এক হোটেল থেকে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর সময় চট্টগ্রামে বিএনপির কোন্দল ছিল তুঙ্গে। তিনি সেই কোন্দল মেটাতে গিয়েছিলেন। গিয়ে তিনি আর ফিরলেন না। নিজের জীবন দিয়ে দিলেন জিয়াউর রহমান। চট্টগ্রামে আব্দুল্লাহ আল নোমান ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী জামাল উদ্দীনের সপক্ষে। দলের আরেক গ্রুপ ছিল শাহ আজিজুর রহমানের সমর্থক। এদের মধ্যে প্রায় ঝগড়াঝাটি ও মারামারি হতো। আজকের জার্তীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে নির্বাচিত বিএনপির এমপি। আব্দুল্লাহ আল নোমানের আকাক্সক্ষা ছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়া। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। সেই অপূর্ণতা নিয়ে তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো। জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সময়ের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন ঝানু রাজনীতিক। আব্দুল্লাহ আল নোমান দূরে থাক, উপপ্রধানমন্ত্রী জামালউদ্দিন আহমদও দল থেকে ছিটকে পড়েন। শাহ আজিজুর রহমান এরশাদ সরকারেরও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

আব্দুল্লাহ আল নোমানের দ্বন্দ্ব ছিল চট্টগ্রামের আরেক সন্তান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদের সাথে। নোমান বেগম জিয়ার প্রথম আমলের মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রী ছিলেন। আব্দুল্লাহ আল নোমানের আতিথেয়তা ভুলব না কোনো দিন। তার সৌজন্য বোধ ছিল অসাধারণ। চট্টগ্রামের সর্বমহলে তার জনপ্রিয়তা ছিল। তার এক ভাই আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। আরেক ভাই ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব। অন্য এক ভাই একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি সহজে আওয়ামী লীগে ভিড়তে পারতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগে যাননি। নোমানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে বিএনপির একটি বর্ণিল অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার সুলতান এখন নেই, উপপ্রধানমন্ত্রী জামাল উদ্দীন আহমদও নেই, এবার নোমানও চলে গেলেন।