তাসাউফ : আত্মা যেখানে গোসল করতে চায়

আমি সন্দেহাতীতভাবে এ সত্য উপলব্ধি করেছি যে , সুফিগণই আল্লাহর একনিষ্ঠ সাধক, আল্লাহর পথের যথার্থ পথিক, তাদের তরিকাই হলো সবচেয়ে নিখুঁত তরিকা। তাদের নৈতিক চরিত্র মানবকুলের শ্রেষ্ঠ জীবনধারা, অতি স্বচ্ছ এবং তারা নিখুঁত ও উন্নত নৈতিকতার অধিকারী, তাদের নৈতিকতা ও চরিত্র এতই বলিষ্ঠ ও উচ্চমানের যে, সব দর্শন বিজ্ঞান ও শরিয়তবেত্তাদের যাবতীয় জ্ঞান গরিমার সমন্বয় করেও এর মোকাবেলা করা যাবে না। অনুরূপ বলিষ্ঠ চরিত্রকাঠামো রচনা করা সম্ভবপর হবে না। কারণ আধ্যাত্মিক এবং জাগতিক নির্বিশেষে তাদের প্রত্যেকটি কাজ নূরে নবুয়তের দ্বারা বিধৌত। এ নুরে নবুয়তকে বাদ দিলে আর কি আছে, যার দ্বারা প্রকৃত সত্যের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে

Musa-Al-Hafiz-2

মুসা আল হাফিজ

রমজান। আত্মার পবিত্রতা রমজানের প্রধান অন্বেষা। সেটা নিয়েই আলাপ হচ্ছিল। এরই মধ্যে ইসলামের আধ্যাত্মিক ব্যবস্থায় অত্যন্ত প্রসিদ্ধ সুফি ও তাসাউফ পরিভাষা নিয়ে কথা উঠল। আমরা এর জন্মসূত্র ধরার চেষ্টা করলাম। কারণ ব্যাপারটি নিয়ে যেমন রয়েছে ব্যাপক জিজ্ঞাসা, তেমনি আছে বিস্তর বিভ্রান্তি। তাসাউফ পরিভাষার জন্ম কোথা থেকে, প্রশ্নটির জবাবে মুসলিম একাডেমিয়ায় রয়েছে নানা মতামত। এগুলোর সারকথা হলো তাসাউফ পরিভাষার জন্ম হয়েছে-

(১) সাফা বা অন্তরের পবিত্রতা থেকে।

(২) আহলুস সুফফা বা সুফফাবাসী : রাসূলুল্লাহ সা:-এর যুগে কিছু বুজুর্গ সাহাবি ছিলেন, যারা মসজিদে নববীতে সর্বদা ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তারা হলেন আহলে সুফফা বা সুফফাবাসী।

(৩) সফফুন থেকে : যার মানে হলো নামাজের কাতার। সুফিরা সর্বদা প্রথম সারিতে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করতেন, তাই সুফি অভিধা লাভ করেন তারা ।

(৪) সুফাহ থেকে : এটি একটি প্রাচীন গোত্রের নাম, যারা কাবার খাদেম ছিল।

(৫) সাফওয়াতুল কাদা থেকে : এর মানে হলো গদির উপর থাকা পশম।

(৬) ইসোফিয়া থেকে : একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ ঐশ্বরিক জ্ঞান।

(৭) সুফানা থেকে : সুফানা এক ধরনের উদ্ভিদ, নির্জন, ময়দান ও আরণ্যক এলাকায় এসব ছায়াবৃক্ষ জন্মে। সুফিরা নির্জন, অনেকেই অরণ্যবাসী, অনেকেই আবার জনপদে থাকতেন, ছায়াবৃক্ষের মতো। তাদের চরিত্রের সাথে সুফানা বৃক্ষের মিল গভীর। সেই অর্থে তাদের সুফি বলা হতো।

(৮) সুফ থেকে : পশম বা উল, পশমি কাপড়।

যারা যে শব্দ-বাক্য প্রস্তাব করেছেন, প্রত্যেকেই তাদের মতামতের সমর্থনে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। কিন্তু ইমাম আবুল হাসান আলী বিন উসমান আল হুজবিরির (১০০৯-১০৭২) মতে, বেশির ভাগ মতামত সাধারণত অভিধানের দিকে মনোযোগ দেয়নি। আরবি অভিধান অনুযায়ী সাফা থেকে যে শব্দ গঠিত হবে, তা ‘সাফাভী’ হবে, সুফি না। সুফফাহ থেকে সাফী হবে, সুফি হবে না। এইভাবে সাফ থেকে ‘সাফী’ হতে পারে, সুফি নয়। এভাবে যদি সুফি সুফানার সাথে সম্পর্কিত হয়, তাহলে শব্দটি ‘সুফানী’ হবে, সুফি নয়।

আবু রায়হান আল-বিরুনির (৯৭৩-১০৪৮) ধারণা হলো সুফি শব্দের উদ্ভব ঘটেছে একটি গ্রিক শব্দ থেকে। তিনি লিখেছেন :

সুফি মানে দার্শনিক। কারণ গ্রিক ভাষায় সোফ শব্দের অর্থ দর্শন, এই কারণেই একজন দার্শনিককে গ্রিক ভাষায় ফিলাসোফ বলা হয়, যার অর্থ প্রজ্ঞা প্রেমিক। যেহেতু ইসলামে একটি দল এমন ছিল যারা গ্রিক মতাদর্শের কাছাকাছি ছিল, তাই এই দলটির নামও সুফি হয়ে যায়। (কিতাবুল হিন্দ, পৃ. ১৭)

মহান আল বেরুনী এখানে ভুল করেছেন। সোফিস্তেস (গ্রিক óïöéóôÞò) কথাটি ব্যবহৃত হতো খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতকে। এর দ্বারা বুঝানো হতো সেকালের কিছু গ্রিক শিক্ষাবিদকে, যারা বিচিত্র বিষয়ে পাঠদান করতেন। তারা শেখাতেন দর্শন, অলঙ্কারশাস্ত্র, সঙ্গীত, গণিত, খেলাধুলা, মল্লযুদ্ধ ইত্যাদি। গ্রিক নৈতিকতা তারা শেখাতেন তরুণ শিক্ষার্থীদের। একসময় তারা খ্যাত হন sophós বা জ্ঞানী মানুষ নামে। ক্রমেই তাদের পরিচয় ছড়াতে থাকে চতুর, কূটতার্কিক, বিভ্রান্তিকর যুক্তি ব্যবহারকারী হিসেবে। কারণ অচিরেই তারা নিজেদের আচরণ দ্বারা এই পরিচয় নির্মাণ করেন।

গ্রিক sophós থেকে পরবর্তীতে জন্ম নেয় ইংরেজি সোফিস্ট (Sophists) কথাটি। সোফিস্টরা সক্রেটিসের তিরস্কার ও নিন্দার সম্মুখীন হন। এরপরে তারা সবার কাছেই নিন্দিত থেকেছেন। মুসলিম পণ্ডিতদের কাছেও তারা কুতর্কের কারিগর হিসেবে বিবেচিত হন। মুসলিম দর্শনে তারা কোনো শ্রদ্ধা পাননি। ফলে সম্মানিত কোনো সাধকদের জামাত তাদের নামে নিজেদের পরিচিত করার আগ্রহ বোধ করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। দ্বিতীয়ত সুফিরা তর্ক ও বাগি¦তণ্ডাকে বরাবরই উপেক্ষার চেষ্টা করেন। তাদের রচিত সাহিত্যে এ প্রবণতা নিন্দিত হয়েছে। ফলে সোফিস্ট প্রবণতাও তাদের অপছন্দের একটি দিক। তৃতীয়ত, ব্যাকরণগত বিচারে সোফিস্তেস থেকে সুফি কথাটা জন্ম নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ গ্রিক শব্দগুলোকে আরবিতে রূপান্তরিত করার সাধারণ নিয়ম ও ঐতিহ্য একে কবুল করে না। প্রাচ্যবিদদের একটি প্রবণতা হলো যেকোনো ভালো জিনিসের উৎস হিসেবে ইউরোপকে নির্দেশ করা। তাদের কেউ কেউ আল বেরুনিকে অবলম্বন করে দাবি করেছেন সুফি পরিভাষাটিও গ্রিক দর্শনের দান।

কিন্তু বিষয়টি এত স্থূল যে, শেষ অবধি বিখ্যাত জার্মান প্রাচ্যবিদ থিউডর নলডেক (১৮৩৬-১৯৩০) এ ধারণাকে দৃঢ়ভাবে খণ্ডন করেন। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে তিনি দেখান, গ্রিক শব্দগুলোকে আরবি ভাষায় স্থানান্তর করার সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী সুফি শব্দের প্রকৃত উৎপত্তি কোনোভাবেই গ্রিক থেকে হতে পারে না।

মূলধারার সুফিদের অভিমত হলো, সুফি শব্দটি সুফ থেকে এসেছে। আবু নাসর সারাজ রহ: বলেন :

‘সুফিদেরকে তার বাহ্যিক পোশাকের কারণে সুফি বলা হয়, এটা এজন্য যে, ভেড়ার পশমের পোশাক পরা নবী ও সাধকদের একটি বিশেষ নিদর্শন।’ (কিতাবুল লাম’ পৃ. ২১)

বস্তুত সুফ-এর ব্যবহার নববী ঐতিহ্যের অন্তর্গত। হাদিসে রয়েছে এর উল্লেখ।

‘হজরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, যেদিন হজরত মূসা আ: আল্লাহ তায়ালার সাথে কথাবার্তা বলেছিলেন সেদিন তিনি ‘সুফ’-এর পাজামা ‘সুফ’-এর জুব্বা ও ‘সুফ’-এর টুপি পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৭৩৪)।

সহিহ মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছে

‘হজরত ইব্ন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, আমরা একবার রাসূলে আকরাম সা:-এর সাথে মক্কা-মদিনার পথে চলছিলাম।... ‘এ হাদিসের শেষাংশে আছে, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, কেমন যেন ইউনুস আ: লাল উষ্ট্রীর পিঠে ‘সুফ’ পরিহিত অবস্থায় আমার চোখে ভেসে উঠছেন। (সংক্ষেপিত)-বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস : ২৬৮, ১৬৬)

এ হাদিসেও দেখা যাচ্ছে, হজরত ইউনুস আ:-এর দেহে ‘সুফ’ ছিল।

সুফ থেকে সুফি পরিভাষার জন্ম, এ মতামতকে সাধারণভাবে কবুল করেছেন পরবর্তী পণ্ডিতগণ। প্রাচ্যবিদদের মধ্যেও শেষ অবধি এই মতামত অধিকতরো শক্তিশালী আসন লাভ করেছে। অগ্রগণ্য প্রাচ্যবিদ এডওয়ার্ড গ্রানভিল ব্রাউন (১৮৬২-১৯২৬)ও একে কবুল করেন। Literary History of persia গ্রন্থে তিনি লিখেন-

সুফিদেরকে সুফের দিকে সম্পৃক্তকরণের এই ধারণাটি এর দ্বারাও সমর্থিত হয় যে, ইরানে সুফিদের ‘পশমিনাপোষ’ (পশম-পরিধানকারী) বলা হয়।

সুফি বলা হয় কাকে? যিনি তাসাউফের অনুশীলন করেন, তিনি সুফি। শায়খুল মাশাইখ আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন কাসিম ওরফে আবু আলী রুযবারী (৮৫০-৯৩৩ খ্রি:) বলেন,

সুফি তিনিই, যিনি আত্মাকে সাফা বা পরিচ্ছন্নতার পশমি পোশাক পরান, প্রবৃত্তির চাহিদাগুলোকে যুহদের; ইহজাগতিকতার প্রতি বিরাগের কঠোরতা দিয়ে দমন করেন, নিজের জন্য মহানবীর সা: পদাঙ্ককে অবধারিত বানিয়ে নেন, আর ইহজাগতিকতাকে লক্ষ্য উদ্দেশ্য থেকে ছেঁটে ফেলেন।

হজরত আমর ইবনে উসমান মক্কি রহ: বলেন সুফি হচ্ছেন তিনি, যিনি সব সময় সেই সত্তার হয়ে থাকেন, যে সত্তা তার প্রভু, স্রষ্টা, পরম করুণাময়।

পীরানে পীর হজরত আবদুল কাদির জিলানী রহ: বলেন-

সুফি হলেন, যিনি সুস্থির বদন, প্রশান্ত হৃদয়, জ্যোতির্ময় চেহারা, প্রশস্ত বক্ষ এবং পরিচর্যাপূর্ণ বাতিনের অধিকারী। আল্লাহর জন্য তিনি দুনিয়ার সব কিছু থেকে হয়ে যান বেপরোয়া।

শায়খ আবু বকর দালফ বিন জাহদার শিবলী রহ: বলেন, সুফি হচ্ছেন সৃষ্টি জগতের সব অধীনতা থেকে আজাদ, আর পরম সত্যের সাথে একান্তভাবে যুক্ত, নিমগ্ন ব্যক্তি।

হজরত আবুল ফয়জ সাওবান বিন ইবরাহীম ওরফে জুননুন মিসরী রহ: বলেন, সুফিগণ এমন সম্প্রদায়, যারা সব বিষয় ও বস্তুর চেয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।

বিখ্যাত অভিধান আল-মুনজিদ -এ লাউলিস মালুক ইসুয়ি সুন্দর এক সংজ্ঞা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘সুফি হলো, যে নিজেকে বিলীন তবে প্রভুর প্রেমের বন্ধনে অস্তিত্বমান। মানবীয় বৈশিষ্ট্যের সংজ্ঞা যার যোজন দূরত্ব আর খোদায়ি সত্তার সঙ্গে যে নিবিড় ঘনিষ্ঠ।’

ইমাম গাযালি রহ: আল মুনকিয মিনাদ দ্বালাল গ্রন্থে সুফিদের সম্পর্কে বলেন, সুফিগণের তরিকা ইলম ও আমলের দ্বারা পূর্ণ, তাদের ইলম অর্জনের প্রতিফল প্রকাশিত হয় তাদের সত্তায়, যা মন্দ চরিত্র ও নিকৃষ্ট বিষয়াবলি থেকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। যেন হৃদয়টি আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছু থেকে মুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও স্বাধীন হয়ে আল্লাহর স্মরণে, ভালোবাসায় ও পবিত্রতার প্রভাবে সুসজ্জিত হয়ে যায়।

আরো অগ্রসর হয়ে ইমাম গাযালি তার সিদ্ধান্তমূলক সত্য উচ্চারণ করেন। লিখেন-

আমি সন্দেহাতীতভাবে এ সত্য উপলব্ধি করেছি যে , সুফিগণই আল্লাহর একনিষ্ঠ সাধক, আল্লাহর পথের যথার্থ পথিক, তাদের তরিকাই হলো সবচেয়ে নিখুঁত তরিকা। তাদের নৈতিক চরিত্র মানবকুলের শ্রেষ্ঠ জীবনধারা, অতি স্বচ্ছ এবং তারা নিখুঁত ও উন্নত নৈতিকতার অধিকারী, তাদের নৈতিকতা ও চরিত্র এতই বলিষ্ঠ ও উচ্চমানের যে, সব দর্শন বিজ্ঞান ও শরিয়তবেত্তাদের যাবতীয় জ্ঞান গরিমার সমন্বয় করেও এর মোকাবেলা করা যাবে না। অনুরূপ বলিষ্ঠ চরিত্রকাঠামো রচনা করা সম্ভবপর হবে না। কারণ আধ্যাত্মিক এবং জাগতিক নির্বিশেষে তাদের প্রত্যেকটি কাজ নূরে নবুয়তের দ্বারা বিধৌত। এ নুরে নবুয়তকে বাদ দিলে আর কি আছে, যার দ্বারা প্রকৃত সত্যের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে?

এর মানে পরিষ্কার। সুফিদের অবস্থান মুসলিম সভ্যতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই পরিভাষার প্রাচীনতা কতটুকু? পরিভাষার সূচনাকাল কখন? শব্দটি কখন এবং কার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল? ইমাম কুশায়রী রহ:-এর জবাবে জানাচ্ছেন :

রাসূলুল্লাহ সা:-এর পর ‘সাহাবাহ’ ব্যতীত সম্মানীয় মুসলমানদের জন্য অন্য কোনো উপাধি ঘোষণা করা হয়নি। কেননা সোহবত বা নবীসান্নিধ্যের সম্মানের চেয়ে বেশি সম্মান আর কিছুতেই হতে পারে না। সাহাবায়ে কেরামের সাহচর্য লাভকারী ব্যক্তিদেরকে তাবেইন বলা হয়, তারপর লোকদেরকে তাবে তাবেইন উপাধিতে ডাকা হয়, তারপর মানুষ বিভিন্ন স্তরে চিহ্নিত হতে থাকেন। তাই দ্বীনের প্রতি বেশি মনোযোগী বুজুর্গদেরকে যাহিদ ও আবিদ উপাধিতে ডাকা হয়, কিন্তু যখন বিদআত ছড়াতে শুরু করে এবং বিভিন্ন ফেরকার উদ্ভব ঘটে, তখন প্রত্যেক দলই দাবি করে যে তাদের মধ্যে ‘যাহিদ’ রয়েছে, তাই সুন্নাহ এর অনুসারী জামাতের বিশিষ্টজনরা তাসাউউফ-এর পরিচয়ে বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন এবং দ্বিতীয় শতাব্দীর আগে এই মনীষীগণ সুফি নামেই খ্যাতি লাভ করেন। (আর রিসালাহ ইলাস সুফিয়্যাহ, পৃ. ৯)

মাওলানা আবদুর রহমান জামির (১৪১৪-১৪৯২) অনুসন্ধান মতে, প্রথম যে বুজুর্গ সুফি উপাধিতে বিখ্যাত হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন শায়খ আবু হাশিম কুনি রহ: (মৃত্যু : ১৫০ হি.)।

আবু মুহাম্মদ জাফর বিন আহমদ বিন হুসাইন আস সিরাজ আল-কারী আমির মুয়াবিয়ার একটি চিঠি নকল করেছেন, যা তিনি মদিনার গভর্নর ইবনে আম্মান আল-হাকামকে লিখেছিলেন, এতে একটি কবিতা ছিল :

তুমি ছিলে একজন সুফির মতো যার কাছে অনেক কিতাবপত্র রয়েছে, যাতে ফারায়েজ এবং কুরআনের আয়াত উল্লেখ হয়েছে।’ (রেওয়ায়েতটি ধারাবাহিক সনদের সাথে, আবু মাখজাফ থেকে হিশাম বিন উরওয়া পর্যন্ত যায়।)

যদি বর্ণনাটিকে প্রামাণ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তাহলে সুফি শব্দটি হিজরি প্রথম শতাব্দীতেও ব্যবহৃত হয়েছিল, এই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

সুফি ও তাসাউফ একান্তই ইসলামী ভিত্তিজাত পরিভাষা। এর বিকৃত অনুশীলন জনসমাজে বিচিত্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করলেও পরিশুদ্ধ তাসাউফ মূলত আত্মশুদ্ধির সেই নদীপ্রবাহ, আমাদের আত্মা যেখানে গোসল করতে চায়!

লেখক : কবি, গবেষক

[email protected]