পত্রিকায় সর্বনাশা ট্যাগের রাজনীতির উসকানি

আর.কে. মিশন রোড থেকে বের হতো এমন একটি পুরনো পত্রিকা যা কয়েক বছর আগে কাওরান বাজারে স্থানান্তরিত হয়; এ নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক খবর প্রকাশ করে। সিলেট এমসি কলেজে ফেসবুক সমালোচনার জেরে এক ছাত্রকে পেটানো হয়। ওই ঘটনায় হোতারা শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্তÑ এ খবর নিশ্চিত না করে তাদের ওপর দায় চাপিয়ে পত্রিকাটি খবর প্রকাশ করে। এ ধরনের নিশ্চিত না হওয়া খবরটি পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রথম কলামে শীর্ষে ছেপে দেয়া হয়। একই সময়ে তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসায় শিবিরের এক নেতাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। অথচ সে খবর পত্রিকাটির কোথাও জায়গা পায়নি। একটি নিশ্চিত ঘটনা যেখানে শিবির ভুক্তভোগী সেটি তারা সংবাদ করেনি। অন্যদিকে, সন্দেহজনক একটি ঘটনা; কারা ঘটিয়েছে নিশ্চিত না হয়ে তার দায় শিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়

opinion01

বিগত সাড়ে ১৫ বছরে জাতি সর্বনাশা ট্যাগের রাজনীতির বিষফল ভোগ করেছে। ধর্মের নামে কালিমা এঁটে কিংবা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি অপবাদ দিয়ে এটি করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও রাজাকারসহ কিছু শব্দকে এ কাজে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক পরিসরে এর প্রয়োগ হয়। নিশানা ছিল শুধু একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী, এতে আক্রান্ত হয় মুষ্টিমেয় মানুষ। তবে শেষ পর্যন্ত সমাজের সব গোষ্ঠী এতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এই রাজনীতি জারি ছিল হাসিনা চম্পট দেয়ার আগ-মুহূর্ত পর্যন্ত। এমনকি তার পতনের কারণও হয়েছিল ট্যাগের একটি শব্দ ‘রাজাকার’। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই শব্দ ব্যবহার করায় দ্রোহের বিস্ফোরণ ঘটে।

ট্যাগের রাজনীতির প্রবক্তা তথাকথিত প্রগতীশীল বামরা। এর পক্ষে বয়ান নির্মাণে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মিডিয়াকে অপব্যবহার করা হয়। বামেরা এ দেশের ধর্মভীরু ও রাজনৈতিক ইসলামের সাথে যুক্তদের শত্রু বিবেচনা করে। তাই কাক্সিক্ষত শ্রেণিহীন সমাজ নির্মাণের কর্মসূচি বাদ দিয়ে বন্দুকের নল সদা ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে তাক করে রাখে। এ কাজে ক্রমাগত লেগে থাকার ভয়াবহ পরিণতি জাতি কড়ায় গণ্ডায় শোধ করেছে। শেষে এ মন্দ ও করুণ পরিণতি থেকে রেহাই পায়নি বাম ও আওয়ামী লীগাররাও।

স্বৈরাচারী হাসিনা দেখতে পেলেন, বামদের ট্যাগের রাজনীতি একটি মোক্ষম অস্ত্র। বাড়তি সুবিধা ছিল এতে মিডিয়ার অন্ধ সমর্থন। জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ও রাজাকার বলে কাউকে নিশ্চিহ্ন করা হলে মিডিয়া তার পক্ষে যুক্তিতর্ক দিয়ে জায়েজ করে দেয়। গণমাধ্যম এটি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় যে, এ গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করা জনগুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। অন্তত জনপরিসরে এ যুক্তি তারা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এ ব্যাপারে গণসম্মতি উৎপাদন করা হয়। ফ্যাসিবাদের গোড়াপত্তনে এটি পাটাতন হিসেবে ব্যবহার হয়। বামদের পৃষ্ঠপোষক মিডিয়া কাজটি সহজ করে দেয়।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করতে কাউকে ট্যাগ দেয়া হাসিনার জন্য তুরুপের তাস হয়ে ওঠে। তিনি ক্ষমতা হাতের মুঠোয় নিতে ক্রমাগত এর নিষ্ঠুর প্রয়োগ করে গেছেন। ট্যাগের শব্দগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখে চাতুরতার সাথে তুলে দেয়া হয়েছিল। বাহিনীগুলোর প্রধানরা এগুলো দিনে-রাতে আওড়াতে থাকেন। পুলিশপ্রধান, র‌্যাবপ্রধান বক্তৃতায় প্রতিনিয়ত শব্দগুলো ব্যবহার করে হাসিনার প্রতিপক্ষকে তটস্থ রাখতেন, এর মাধ্যমে দেশব্যাপী গণআতঙ্ক তৈরিতে তারা সফল হন।

ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও এদের শুভাকাক্সক্ষীদের প্রথমে দমন করা হয়। হাসিনার ফ্যাসিবাদের শুরুতে এ গোষ্ঠীর প্রথম কাতারে থাকা ব্যক্তিদের খুন-গুম করে দৃশ্যপট থেকে বিদায় করে দেয়া হয়। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রথম প্রাণঘাতী অস্ত্রের প্রয়োগ করা হয়েছে। রাজপথে তাদের প্রতিবাদ বিক্ষোভে সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যার ‘বৈধ’ সংস্কৃতি চালু হয়। হাসিনার আমলে রাস্তায় এই গোষ্ঠীর বেওয়ারিশ লাশ দেখতে দেখতে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ও রাজাকারÑ এ তকমা দেয়া হলে তার সব রাজনৈতিক ও মানবাধিকার হরণ জায়েজ, এই সম্মতি সমাজে উৎপাদিত হয়েছিল। এদের গুম- খুন-হত্যা নিয়ে তাই সবাই মুখে কুলুপ এঁটে থাকত।

অপরাপর রাজনৈতিক সামাজিক শক্তি বিষয়টি দেখেছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দমন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার ‘ভালো কাজ’ হিসেবে। তাই তারা প্রতিবাদের কোনো তাগিদ বোধ করেননি। নিশানার প্রথম কাতারের রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দ্বিতীয় সারির রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একই অস্ত্র প্রয়োগ শুরু করেন হাসিনা। তখন কিন্তু প্রথম ধাপের লোকদের কোনো শক্তি ছিল না, তারা দ্বিতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক শক্তির পক্ষ হয়ে প্রতিবাদ করবেন। এভাবে বামদের তৈরি করা বয়ান অপব্যবহার করে হাসিনা তার একেকটি প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করেছেন। এরপর ট্যাগের রাজনীতির কুফল থেকে বামরা যেমন রক্ষা পায়নি; তেমনি হাসিনার নিজ দলের নেতাকর্মীরাও রক্ষা পাননি।

জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও রাজাকারÑ এসব শব্দের সাথে হাসিনা নতুন নতুন শব্দ যোগ করতে থাকেন। সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিÑ এ ধরনের শব্দও ট্যাগের আওতায় এসে যায়। শুরুতে ব্যবহৃত শব্দগুলো দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে ইসলামী ছাত্রশিবির এবং সারা দেশ থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের বিতাড়িত করা হয়। ওই একই শব্দগুচ্ছ সমাজের অন্যদের জন্য খাপ খাওয়ানো যায় না, তাই এ ধরনের বহু শব্দ তাদের যুক্ত করতে হয়েছে। এগুলোর আওতায় পড়ে খোদ আওয়ামী লীগের লোকেরাও গুম-খুনের লক্ষ্যে পরিণত হন। ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য নিজের দলের কোনো কোনো নেতা-কর্মী-সমর্থককে শায়েস্তার প্রয়োজন পড়ে। আবার কিছু ক্ষেত্রে দলের ভেতরের লোকদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষকে উৎখাত করার প্রয়োজন অনুভূত হয়। তারাও নিজেদের প্রতিপক্ষ বিদায় করতে হাসিনার ট্যাগের রাজনীতির কূটকৌশল ব্যবহার করে। ট্যাগের রাজনীতির কুফল হচ্ছেÑ এটি শেষ পর্যন্ত পক্ষ-বিপক্ষ কাউকে ছাড়ে না, খোদ প্রবক্তরাও আক্রান্ত হন।

হাসিনার আমলে গুম করা হয় কুষ্টিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেনকে। তার ও তার পরিবারের সেই একই পরিণতি হয়েছে; যেমন হয়েছে সরকারবিরোধীদের বেলায়। তার স্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানান, মন্ত্রী, এমপি, শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ ও র‌্যাবের সদর দফতরে বছরের পর বছর ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছেন তিনি। স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ক্ষমতাধারী লোক তার কাছ থেকে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু স্বামীকে ফিরে পাননি। একই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বহু বিরোধী রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের একটি চক্রÑ এ নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠে। চক্রের সদস্যরা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। ট্যাগের রাজনীতি শেষ পর্যন্ত একটি গোষ্ঠীর বিপুল অর্থ কামানোর হাতিয়ার হয়েছে।

একই ঘটনা ঘটে রামপুরা ছাত্রলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর ভাগ্যে। ২০১৬ সালে গুম হওয়ার পর তার পরিবারকেও জামায়াত-বিএনপির গুম হওয়ার পরিবারগুলোর পরিণতি ভোগ করতে হয়। মায়ের ডাকের সদস্যদের সাথে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়েছে পরিবারের সদস্যকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক পরিসর থেকে বিদায় করতে ট্যাগের ব্যবহার ক্রমেই আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছিল। তার নজির কক্সবাজার টেকনাফের দলটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য একরামুল। র‌্যাব গুলি করে তাকে হত্যা করে। পরিবারকে ফোনের অপর প্রান্তে রেখে খুনিরা তার প্রাণ কেড়ে নেয়। তিনি ছিলেন টেকনাফের চারবার নির্বাচিত কাউন্সিলর। তার বিরুদ্ধে র‌্যাব মাদক চোরাকারবারি বলে ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। তাদের কাছে এর কোনো প্রমাণ ছিল না। ওই ঘটনায় দেখা গেল, আওয়ামী লীগ নিজের লোকদের রক্ষার বদলে র‌্যাবের খুনি সদস্যদের প্রতি সমর্থন জানাল। এ খুনের পর র‌্যাবপ্রধান বেনজীরের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। তার পরও আওয়ামী লীগ নিজ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে বিসর্জন দিয়ে র‌্যাবকে বাঁচানোর পথ গ্রহণ করে। হাসিনার আমলে কয়েক হাজার মানুষ খুন-গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেøখ করার মতো একটি অংশ ছিল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের লোকজন। এ ধরনের রাজনীতির পরিণতি সর্বগ্রাসী, কারণ ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা গোষ্ঠীর কাছে নিজের দলের লোকজনের চেয়েও গদি রক্ষাকারী খুনি চক্রের কদর বেড়ে যায়। এই নীতির অংশ হিসেবে নিজের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের প্রাণের বিনিময়ে হলেও ফ্যাসিস্টরা গদি রক্ষার কৌশল নিতে বাধ্য হয়।

ট্যাগ ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে। জাতি স্পষ্ট করে বুঝে গেছে, বিভক্ত করে শাসন করার কুৎসিত পন্থা সর্বগ্রাসী। এর অপকৌশলও সবার জানা হয়ে গেছে। ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীকে প্রথমে নিশানা বানানো হয়। পরে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এর আওতা বাড়ানো হয়। সম্প্রতি ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে ট্যাগ দেয়ার মন্দ সংস্কৃতি চালুর আবারো অপচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। বামদের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীটির সাথে কিছু মিডিয়াকে এ কাজে ইন্ধন দিতে দেখা যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। হাসিনার সর্বগ্রাসী ট্যাগের রাজনৈতিক সংস্কৃতির যাত্রাও ক্যাম্পাস থেকেই শুরু হয়েছিল। সেই সময়ও মিডিয়া পালন করেছিল নিয়ামকের ভূমিকা।

৫ আগস্ট অভ্যুত্থান-পরবর্তী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে কুয়েটে প্রথম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। প্রায় একই সময় আরো কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এগুলো ঘিরে কয়েকটি পত্রিকায় আগের মতো শিবিরকে অন্যায়ভাবে দোষ চাপিয়ে দেয়ার কূটকৌশল দেখা গেল। আর.কে. মিশন রোড থেকে বের হতোÑ এমন একটি পুরনো পত্রিকা যা কয়েক বছর আগে কাওরান বাজারে স্থানান্তরিত হয়; এ নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক খবর প্রকাশ করে। সিলেট এমসি কলেজে ফেসবুক সমালোচনার জেরে এক ছাত্রকে পেটানো হয়। ওই ঘটনায় হোতারা শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্তÑ এ খবর নিশ্চিত না করে তাদের ওপর দায় চাপিয়ে পত্রিকাটি খবর প্রকাশ করে। এ ধরনের নিশ্চিত না হওয়া খবরটি পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রথম কলামে শীর্ষে ছেপে দেয়া হয়। একই সময়ে তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসায় শিবিরের এক নেতাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। অথচ সে খবর পত্রিকাটির কোথাও জায়গা পায়নি। একটি নিশ্চিত ঘটনা যেখানে শিবির ভুক্তভোগী সেটি তারা সংবাদ করেনি। অন্যদিকে, সন্দেহজনক একটি ঘটনা; কারা ঘটিয়েছে নিশ্চিত না হয়ে তার দায় শিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়।

মিডিয়ার বড় একটি অংশ শিবির নিয়ে কয়েক দশক ধরে হলুদ সাংবাদিকতা করছে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসে যেকোনো খুন-সন্ত্রাসের দায় চোখ বন্ধ করে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া একটি রেওয়াজে পরিণত করা হয়েছে। সেসব ঘটনার দায়ও শিবিরের ওপর চাপানো হয়েছে; যার ভুক্তভোগী শিবির নিজে। এ ধরনের বহু ঘটনা বিচারিক প্রক্রিয়ায় শিবির দায় থেকে মুক্তি পেয়েছে। তবে এগুলো বহু ছাত্রের জীবনে মর্মন্তুদ ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়েছে। খুনি-অপরাধী হিসেবে তাদের সমাজের সামনে কলঙ্ক লেপ্টে দেয়া হয়েছে। যার দাগ তারা মোছার আর সুযোগ পায়নি। কাউকে কাউকে কারাগারে দিয়ে দিতে হয়েছে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়।

এ ধরনের একটি ঘটনা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তাহের হত্যাকাণ্ড। ঘটনার পরপর মিডিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের ওপর এর দায় চাপিয়ে খবর প্রকাশ করে। সিন্ডিকেট করে টানা বছরের পর বছর খবর প্রচার করা হয়। সাক্ষী-প্রমাণ ছাড়াই শিবির খুনি সাব্যস্ত হয়ে যায়। ১৭ বছর পর উচ্চ আদালতের রায়ে দেখা গেল, এ খুনের সাথে শিবিরের দূরতম সম্পর্ক নেই। ইতোমধ্যে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মীর কারাগারে কেটেছে দীর্ঘদিন। আদালত পাড়ায় দৌড়াতে গিয়ে বাকি জীবনও তাদের তছনছ হয়ে গেছে। অথচ সিন্ডিকেট করে যেই মিডিয়া তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে তারা এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিবির নির্দোষÑ এই খবর প্রকাশ করেনি।

শিবিরের ওপর দায় চাপানোর মন্দ সংস্কৃতি অভ্যুত্থান-পরবর্তী আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। মিডিয়া এতে উসকানি দেয়ায় তা জনপরিসরে প্রভাব বিস্তার করছে। সম্প্রতি কুয়েটের ঘটনায় একটি প্রধান ছাত্র সংগঠন শিবিরের ওপর এর দায় চাপিয়ে দেয়ার প্রকাশ্য অপচেষ্টা চালায়। সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্র সংগঠনের সভাপতি সেক্রেটারিকে লক্ষ্য করে বলছেন, শিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দাও। এই প্রবণতার জন্য ওই ছাত্র সংগঠনের চেয়ে মিডিয়াকে দায় বেশি নিতে হবে। এমন অন্যায় অবস্থান নেয়ার প্রণোদনা তারা পায় মিডিয়ার কাছ থেকে।

আর.কে. মিশন রোড থেকে বের হতোÑ এমন একটি

পুরনো পত্রিকা যা কয়েক বছর আগে কাওরান বাজারে স্থানান্তরিত হয়; এ নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক খবর প্রকাশ করে। সিলেট এমসি কলেজে ফেসবুক সমালোচনার জেরে এক ছাত্রকে পেটানো হয়। ওই ঘটনায় হোতারা শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্তÑ এ খবর নিশ্চিত না করে তাদের ওপর দায় চাপিয়ে পত্রিকাটি খবর প্রকাশ করে। এ ধরনের নিশ্চিত না হওয়া খবরটি পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রথম কলামে শীর্ষে ছেপে দেয়া হয়। একই সময়ে তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসায় শিবিরের এক নেতাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। অথচ সে খবর পত্রিকাটির কোথাও জায়গা পায়নি। একটি নিশ্চিত

ঘটনা যেখানে শিবির ভুক্তভোগী সেটি তারা সংবাদ করেনি। অন্যদিকে, সন্দেহজনক একটি ঘটনা; কারা ঘটিয়েছে নিশ্চিত

না হয়ে তার দায় শিবিরের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়