মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য বন্ধে ইউক্রেনের সামরিক অভিযানে যে প্রভাব পড়বে

ইউক্রেন মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হিমার্স লঞ্চার বা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সরবরাহ করা স্টর্মশ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দূরপাল্লার পশ্চিমা অস্ত্র কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে না।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী | ছবি - সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইউক্রেনে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। রাশিয়ার সাথে ২০২২ সালে যুদ্ধের শুরু থেকে ইউক্রেনকে উল্লেখযোগ্যহারে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে আসছে দেশটি। রুশ বাহিনীকে নিশানা করতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয় একান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও রয়েছে এর মধ্যে।

ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের সুনির্দিষ্ট তাৎপর্য কী তা স্পষ্ট কারণে কখনোই বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়নি।

কিন্তু অধিকাংশ বিশ্লেষক মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিষয়ে একমত। এর একটি হলো ইউক্রেনকে রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অভিযানের পরিকল্পনা করতে সহায়তা করা এবং অপরটি সম্ভাব্য রাশিয়ান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি সম্পর্কে কিয়েভকে গুরুত্বপূর্ণ আগাম সতর্কতা প্রদান করা।

মার্কিন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ও সংকেত ইউক্রেনীয় বাহিনীর সামনের সারির যোদ্ধাদের রাশিয়ান বাহিনীর অবস্থান, তাদের গতিবিধি ও সম্ভাব্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।

ইউক্রেন মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হিমার্স লঞ্চার বা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সরবরাহ করা স্টর্মশ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দূরপাল্লার পশ্চিমা অস্ত্র কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে না।

এছাড়াও ওয়াশিংটনের রিয়েল-টাইম তথ্যের অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামো ও বেসামরিক জনসংখ্যাকে আসন্ন হুমকি সম্পর্কে আগাম তথ্য দেয়।

মার্কিন স্যাটেলাইটের দেয়া প্রাথমিক সতর্কতামূলক তথ্যের ভিত্তিতেই ইউক্রেনের বাসিন্দারা কমবেশি বিমান হামলার সাইরেন ও মুঠোফোনে সতর্ক বার্তা পায়। এটি রুশ ভূখণ্ডের গভীরে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণও শনাক্ত করতে পারে।

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহে দীর্ঘস্থায়ী বাধা ইউক্রেনের আত্মরক্ষার ক্ষমতার ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কয়েক মাস আগে ইউক্রেন আশা করেছিল, অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের ফলে এটি দেশজুড়ে শহর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ রুশ হামলার আরো বেশি সংখ্যক সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে।

কিন্তু এখন ইউক্রেনের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ ফুরিয়ে আসছে। ইউরোপের দেশগুলো স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তা কিছু হুমকি মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারলেও রাশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারবে না।

এটা স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বন্ধ রাখার বিষয়টিকে আরেকটি কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেন, ইউক্রেন যদি মার্কিন নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করতে সম্মত হয় তবে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পুনরায় শুরু হতে পারে।

তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, ‘আমি মনে করি যদি আমরা এই আলোচনাগুলোকে থামাতে পারি এবং এই আলোচনার দিকে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে প্রেসিডেন্ট এই স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার বিষয়ে কঠোরভাবে বিবেচনা করবেন।’

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ ফক্স বিজনেসকে বলেন, ‘এই স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নেয়া হবে।’

তবে এটা স্পষ্ট যে স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নেয়া বিনিময়ে হোয়াইট হাউস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে কী চায়।

সূত্র : বিবিসি

বিষয়সমূহ