সিরিয়ায় প্রতিশোধমূলক হামলায় নিহত ১ হাজার ছাড়াল
ব্রিটিশভিত্তিক সিরীয় অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ৭৪৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৫ সদস্য ও আসাদসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠীর ১৪৮ জন নিহত হয়েছেন। খুব কাছ থেকে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের অনুগতদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডে এক হাজারেরও বেশি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার (৯ মার্চ) যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী একটি গোষ্ঠী এমনে তথ্য দিয়েছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবর অনুসারে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির ১৪ বছরে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের ঘটনা এটি।
ব্রিটিশভিত্তিক সিরীয় অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ৭৪৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৫ সদস্য ও আসাদসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠীর ১৪৮ জন নিহত হয়েছেন। খুব কাছ থেকে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
এছাড়া লাতাকিয়া শহরের বেশিভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ ও খাবার পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই সংঘাতের শুরু হয়েছে। দামেস্কো সরকারের জন্য যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে মাস-তিনেক আগে সিরিয়ার কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছে তারা।
সরকার জানিয়েছে, আসাদ বাহিনীর অবশিষ্টাংশের হামলার জবাব দিচ্ছে তারা। আর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার জন্য ব্যক্তিগত হামলার ঘটনাকে দায়ী করা হয়েছে।
আলবীয়দের ওপর প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড
আলবীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সরকার-অনুগত সুন্নি মুসলমানরা শুক্রবার প্রথম এই প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে, যা আসাদ সরকারকে ক্ষমতচ্যুত করতে নেতৃত্ব দেয়া হায়াত তাহরির আল-শামের জন্য বড় ধাক্কা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এপি জানিয়েছে, বাড়ির সামনের ফটক ও সড়কে আলবীয়দের গুলি করে হত্যা করেছে বন্দুকধারীরা। নিহতদের বেশিভাগই পুরুষ। বিভিন্ন গ্রামে তাদের অনেক বাড়িঘর লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য কয়েক হাজার আলবীয় বাসিন্দা পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে উপকূলীয় শহর বানিয়াস। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, বাড়ির ভেতরে, ঘরের ছাদেও পড়ে আছে লাশ। কবর দেয়ার মতো সেখানে কেউ নেই।’
একজন বাসিন্দা বলেন, ‘শুক্রবার খুবই কাছ থেকে পাঁচজনকে হত্যা করা হলেও তাদের লাশ কবর দিতে দেয়নি বন্দুকধারীরা।’
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর পরিবার নিয়ে পালিয়ে যাওয়া বানিয়াসের ৫৭ বছর বয়সী বাসিন্দা আলি শেহা বলেন, ‘তাদের গ্রামে অন্তত ২০ প্রতিবেশী ও সহকর্মীকে বাড়ি কিংবা দোকানে হত্যা করা হয়েছে।’
আসাদ সরকারের অপরাধের দায়ে প্রতিশোধমূলকভাবে এসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বাসিন্দারা বলছেন, ‘আশপাশের শহর ও গ্রাম থেকে আসা বিদেশী যোদ্ধা ও উগ্রবাদীরা রয়েছেন বন্দুকধারীদের মধ্যে।’
আলি শেহা বলেন, ‘এটা খুবই খারাপ। রাস্তায় পড়ে আছে লাশ।’
পালিয়ে যাওয়ার সময় ফোনে এপিকে এসব কথা বলছিলেন তিনি। তখন শহর থেকে তিনি ২০ কিলোমিটার দূরে। এই আলবীয় বলেন, ‘তার অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ১০০ মিটারের কম দূরত্বে বন্দুকধারীরা জড়ো হচ্ছিল। বাড়িঘর ও বাসিন্দাদের ওপর তারা এলাপাতাড়ি গুলি ছুড়ছে।’
তার নিজের জানা একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘হত্যার আগে ধর্ম নিশ্চিত হতে বাসিন্দাদের পরিচয়পত্র দেখেন বন্দুকধারীরা। কিছু বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, লুটতরাজ করেছে ও গাড়ি চুরি করে নিয়ে গেছে তারা।’
সিরীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, আসাদ অনুগতদের কাছ থেকে বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সরকারি বাহিনী। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে উপকূলীয় শহরটির সব সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বাসিন্দারা বলছেন, এক দিন আগে নিহত ৩১ জনের লাশ শনিবার সকালে গণকবর দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে নয়টি শিশু ও চার নারী রয়েছেন।
গত কয়েক দশক ধরে আসাদের সমর্থকদের বড় একটি অংশ ছিল আলবীয়রা। শিয়া মুসলমানদের একটি শাখা হচ্ছেন তারা। আসাদ সরকারের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ পদে ছিলেন দেশটির এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর লোকজন।
নতুন সরকার দাবি করছে, তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে আসাদ অনুগতরাই এই হামলা চালিয়ে আসছে।
সূত্র : ইউএনবি