৪০ বছর পর তুরস্কের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পিকেকের

এরদোগান শুক্রবার ওজালানের আহ্বানকে একটি ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে অভিহিত করে জানান, বিদ্রোহ অবসানের আলোচনা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য তুরস্ক নিবিড়ভাবে নজর রাখবে।

৪০ বছর পর তুরস্কের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পিকেকের
পিকেকের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ ওজালানের ছবি সম্বলিত একটি পতাকা উড়াচ্ছেন সিরিয়ান কুর্দি নারী | ছবি - সংগৃহীত

কুর্দিশ সামরিক সংস্থা কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) কারাবন্দী নেতা আবদুল্লাহ ওজালান চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলমান সশস্ত্র দলটি ভেঙে দেয়ার এবং শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার এ যুগান্তকারী আহ্বানের পর শনিবার (১ মার্চ) নিষিদ্ধ ঘোষিত কুর্দি বিদ্রোহীরা তুরস্কের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে।

পিকেকেপন্থী বার্তাসংস্থা এএনএফকে ওজালানের কথা উল্লেখ করে পিকেকে নির্বাহী কমিটি বলেছে, ‘শান্তি ও গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য নেতা অপোর আহ্বান বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করার জন্য আমরা শনিবার থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছি।’

উত্তর ইরাকে অবস্থিত এ কমিটি বলেছে, ‘আমরা আহ্বানের সাথে একমত এবং আমরা এটি অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করব। আক্রমণ না করা পর্যন্ত আমাদের কোনো বাহিনী সশস্ত্র পদক্ষেপ নেবে না।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। গোষ্ঠীটি ১৯৮৪ সাল থেকে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। এর লক্ষ্য ছিল কুর্দিদের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসন, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তুরস্কের ৮৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ কুর্দি।

ওজালানকে ১৯৯৯ সালে কারাবন্দী করার পর থেকে সংঘাত বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সংঘাতে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

কারাগারে ওজালানের সাথে একাধিক বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার কুর্দিপন্থী ডিইএম পার্টি একটি বিবৃতি প্রচার করে। বিবৃতিতে বলা হয়, ওজালান পিকেকে-কে অস্ত্র জমা দেয়ার পাশাপাশি একটি কংগ্রেস আহ্বানের মাধ্যমে সংগঠনের বিলুপ্তি ঘোষণার কথা বলেছেন।

পিকেকে শনিবার জানায়, তারা ওজালানের ইচ্ছা অনুযায়ী একটি কংগ্রেস ডাকার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তার জন্য একটি উপযুক্ত নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং কংগ্রেস সফল করার জন্য ওজালানকে ‘ব্যক্তিগতভাবে এটি পরিচালনা ও নেতৃত্ব দিতে হবে।’

দলটি আরো বলেছে, ওজালানের কারাগারের পরিস্থিতি শিথিল করতে হবে। তাকে ‘স্বাধীনতাভাবে বসবাস ও কাজ করার সক্ষমতা দিতে হবে এবং যে কারোর সাথে বাধাহীন যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দিতে হবে।’

উত্তর সিরিয়ায় মোতায়েন থাকা তুর্কি সেনাবাহিনী নিয়মিতভাবে সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোতে হামলা চালায়। সিরিয়ার কুর্দি বাহিনীকে তারা পিকেকের সাথে সংশ্লিষ্ট ‘সন্ত্রাসী’ বলে মনে করে।

এদিকে এরদোগান শুক্রবার ওজালানের আহ্বানকে একটি ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে অভিহিত করে জানান, বিদ্রোহ অবসানের আলোচনা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য তুরস্ক নিবিড়ভাবে নজর রাখবে।

ইরাক ওজালানের আহ্বানকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ’এটি এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা অর্জনের দিকে একটি ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

ইরাকে পিকেকে-র উপস্থিতি বাগদাদ ও তুরস্কের আঙ্কারার মধ্যে বারবার উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ গোষ্ঠীটি ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। সেখানে তুরস্কও তাদের সামরিক ঘাঁটিও স্থাপন করেছে এবং প্রায়শই কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে স্থল ও বিমান অভিযান পরিচালনা করে।

সূত্র : এএফপি