ধ্বংসস্তূপের মাঝেও রমজানের উৎসবে মাতোয়ারা গাজাবাসী

‘আমরা বাস্তুচ্যুত পরিবার এবং যুদ্ধে যাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের জন্য কিছুটা আনন্দ বয়ে আনার চেষ্টা করেছি। উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির জন্য আমরা সাজসজ্জা ও আলোর ব্যবস্থা করেছি।’

ধ্বংসস্তূপের মাঝেও রমজানের উৎসবে মাতোয়ারা গাজাবাসী
ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই বাতি ও ব্যানার দিয়ে রাস্তা সাজাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা | ছবি - সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজানের মাস। গত ১৫ মাস ধরে চলা ইসরাইলের আগ্রাসনে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজায় শত দুর্দশার মধ্যেও শুরু হয়েছে রমজানের প্রস্তুতি। শনিবার এই ধ্বংসস্তুপেই রমজানের প্রথম সেহরির জন্য একত্রিত হয়েছেন গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের বাসিন্দারা।

রমজান উপলক্ষে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই বাতি ও আলোকিত সাজসজ্জা দিয়ে রাস্তাগুলো সাজিয়েছে স্থানীয়রা। সংযমের মাস রমজানের চেতনা রক্ষায় তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শত দুর্ভোগেও রমজান পালনে তাদের এ উদ্দীপনা স্মরণ করিয়ে দেয় ফিলিস্তিনিদের ঈমানের দৃঢ়তা ও তাদের সহনশীলতা।

জর্ডানিয়ান রিলিফ ইনিশিয়েটিভের একজন স্বেচ্ছাসেবক সুলেমান আল-ফাররা আনাদোলুকে বলেন, ‘যুদ্ধ ও ধ্বংসাবশেষ সত্ত্বেও আমরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সম্মিলিত সেহরি আয়োজন করেছি। এত দুর্ভোগের মধ্যে আমরা আমাদের জনগণের মনে একটু আনন্দ আনতে চেয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাস্তুচ্যুত পরিবার এবং যুদ্ধে যাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের জন্য কিছুটা আনন্দ বয়ে আনার চেষ্টা করেছি। উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির জন্য আমরা সাজসজ্জা ও আলোর ব্যবস্থা করেছি।’

শিশুসহ কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি তাদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের পাশে একটি লম্বা টেবিলের চারপাশে জড়ো হন। এ দৃশ্য ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামে তাদের সংহতি ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করে।

গাজার এক বৃদ্ধ বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের সহায়তায় আমরা এই সম্মিলিত সেহরি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুদের আনন্দ দিতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘রক্তপাত ও ধ্বংসযজ্ঞের পরও আমরা দুঃখে ভেঙে পড়িনি। যুদ্ধের আগেও আমরা এভাবেই রমজান পালন করতাম। তাই যুদ্ধের আগে ও পরে আমরা এই ঐতিহ্যগুলো অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এবারের রমজান ফিলিস্তিনিদের জন্য মিশ্র আবেগ নিয়ে এসেছে- একদিকে পবিত্র মাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা, অপরদিকে ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য গভীর শোক।

এদিকে রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য গাজাজুড়ে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার ও রাস্তাঘাট সাজানোর কাজ করছে পৌরসভাগুলো।

তবে গাজার প্রায় ৮৮ শতাংশ অবকাঠামো- বাড়িঘর, প্রতিষ্ঠান ও প্রয়োজনীয় পরিষেবা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় ধ্বংসযজ্ঞ পরিষ্কার করার কাজ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সূত্র : আনাদোলু অ্যাজেন্সি