কুর্দি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত করার চুক্তি ঘোষণা করলেন আল-শারা
সোমবার প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে উভয়পক্ষের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে ‘সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের সীমান্ত চৌকি, বিমানবন্দর এবং তেল ও গ্যাসক্ষেত্রসহ সিরিয়ার প্রশাসনের মধ্যে একীভূতকরণ’ সংক্রান্ত চুক্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা সোমবার কুর্দি-অধ্যুষিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) প্রধান মাজলুম আবদির সাথে উত্তর-পূর্বে স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি প্রশাসনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় সরকারের সাথে একীভূত করতে একটি চুক্তি সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে আল-শারার নেতৃত্বে সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেখানে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। নতুন গঠিত সরকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে ভেঙে দিয়ে পুরো দেশের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আসাদপন্থী আলাউই বিদ্রোহীদের সাথে কয়েকদিন ধরে চলা সহিংসতা আসাদের পতনের পর দেশটির স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থিতিশীলতা আনতে নতুন এই চুক্তিটি বছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে উভয়পক্ষের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে ‘সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের সীমান্ত চৌকি, বিমানবন্দর এবং তেল ও গ্যাসক্ষেত্রসহ সিরিয়ার প্রশাসনের মধ্যে একীভূতকরণ’ সংক্রান্ত চুক্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এসডিএফ নেতা মাজলুম আবদির সাথে আল-শারার করমর্দনের একটি ছবি প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কুর্দি সম্প্রদায় সিরিয়া রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য উপাদান। রাষ্ট্র তাদের নাগরিকত্বের অধিকার ও সব ধরনের সাংবিধানিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
এটি সিরিয়ার সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে বিভাজন, ঘৃণামূলক বক্তব্য ও বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে।
আবদি গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘চুক্তিটি নতুন সিরিয়া গড়ে তোলার একটি বাস্তব সুযোগ।’
এসডিএফ নেতা এক্সে এক বার্তায় বলেন, ‘আমরা এমন একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা সমস্ত সিরিয়ার নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করবে এবং আমাদের জন্য শান্তি ও মর্যাদার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।’
এসডিএফ স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি প্রশাসনের কার্যত সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করে এবং উত্তর ও পূর্ব সিরিয়ার বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে দেশের বেশিভাগ তেল ও গ্যাসক্ষেত্রও রয়েছে, যা দেশ পুনর্গঠনে নতুন প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।
নতুন চুক্তিতে ’আসাদের অবশিষ্টাংশ এবং দেশের নিরাপত্তা ও ঐক্যের জন্য সব হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিরিয়ার রাষ্ট্রকে সমর্থন করার’ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
সিরিয়ায় নতুন কর্তৃপক্ষ সোমবার আসাদের অনুগতদের বিরুদ্ধে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, কমপক্ষে এক হাজার ৬৮ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এদের বেশিভাগই আলাউই সম্প্রদায়ের সদস্য, যাদের নিরাপত্তা বাহিনী বা মিত্র গোষ্ঠীগুলো মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদের অনুগত বন্দুকধারীরা সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর পর উপকূলীয় আলাউই সম্প্রদায়ের কেন্দ্রস্থলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, এই লড়াইয়ে ২৩১ জন নিরাপত্তা কর্মী ও ২৫০ জন আসাদপন্থী যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
আসাদ পরিবারের কয়েক দশকের শাসনামলে প্রান্তিক ও নিপীড়িত কুর্দিরা তাদের ভাষায় কথা বলার, তাদের ছুটি উদযাপনসহ অনেক ক্ষেত্রেই সিরিয়ার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত ছিল।
২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের সময় সরকারি বাহিনী প্রত্যাহারের সুযোগ নিয়ে এসডিএফ উত্তর ও উত্তর-পূর্বে কার্যত স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করে।
সূত্র : বাসস