ট্রাম্পের সাথে বাগবিতণ্ডা : যুক্তরাজ্যের পূর্ণ সমর্থন পেলেন জেলেনস্কি
তিনি অত্যন্ত আনন্দিত যে তার দেশের এমন বন্ধু আছে। যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর আগে হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে বাগবিতণ্ডার পর তাকে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে বলা হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের সাথে সাক্ষাত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ সময় স্টারমার তাকে বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য জুড়ে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন’ আছে।
জেলেনস্কি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত যে তার দেশের এমন বন্ধু আছে। যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর আগে হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে বাগবিতণ্ডার পর তাকে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে বলা হয়েছিল।
জেলেনস্কি এবং স্যার কিয়ের ইউক্রেনে সামরিক সরবরাহের জন্য ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন পাউন্ডের একটি চুক্তিতে সই করেছেন। এই অর্থ জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদের মুনাফা থেকে শোধ হবে।
শনিবারের বৈঠকের পর স্যার কিয়ের স্টারমার ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে কথা বলেছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা এবং বৃহত্তর ইউরোপীয় নিরাপত্তার বিষয়ে রোববার লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের একটি সম্মেলন আয়োজন করছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া জেলেনস্কি রাজা চার্লস তৃতীয়-এর সাথে সাক্ষাত করবেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে সেতু হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়ে যে কম জড়িত হতে চাইছে, সেই আকাঙ্ক্ষা ইউরোপও গ্রহণ করেছে।
জেলেনস্কির এক দিন আগে কিয়ের স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আন্তরিক পরিবেশেই বৈঠক করেছিলেন।
বৈঠকের সামনে তিনি ট্রাম্পের কাছে রাজার একটি আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু ওভাল অফিসের ঘটনার পর এসএনপি এমপিরা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
ওভাল অফিসের বাগবিতণ্ডার ঘটনার পর স্যার কিয়ের ফোনে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি ইউক্রেনের জন্য একটি উপায় বের করতে চান, কারণ তারা শান্তি চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টি চাইছেন।
শনিবার জেলেনস্কির ডাউনিং স্ট্রিট সফরে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর জন্য অব্যাহত সমর্থন জানানোর একটি সুযোগ করে দিয়েছে।
এ সময় বাইরে জনতার উল্লাসের কথা উল্লেখ করে তিনি ইউক্রেনের নেতাকে বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যের মানুষ এভাবেই বাইরে এসে দেখিয়েছে যে তারা আপনাকে ও ইউক্রেনকে কতটা সমর্থন করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আপনার ও ইউক্রেনের সাথে আছি যতটা দীর্ঘ সময় দরকার।’
জবাবে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি অনেক মানুষ দেখেছি এবং যুদ্ধের শুরু থেকেই যুক্তরাজ্যের মানুষকে এমন বড় সমর্থনের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
তিনি জানান, রাজা চার্লসের সাথে বৈঠক নিয়ে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত এবং ইউরোপিয়ান সম্মেলনের জন্যও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এটা পরিষ্কার যে রাজার সাথে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বৈঠকটি হচ্ছে তারই অনুরোধে, যাতে যুক্তরাজ্য সরকার সায় দিয়েছে।
ডাউনিং স্ট্রিটের বৈঠকের পর জেলেনস্কি যুক্তরাজ্যে সমর্থনের প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ থেকে ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন পাউন্ড এর বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, এই অর্থ ইউক্রেনে অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হবে। এটি সত্যিকার ন্যায় বিচার। যারা যুদ্ধ শুরু করেছে তাদের অবশ্যই মূল্য দিতে হবে। এই ঋণের ঘোষণাটি প্রথম দেয়া হয়েছিল গত অক্টোবরে।
হোয়াইট হাউজের ঘটনার পর জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিতর্ক সত্ত্বেও আমরা কৌশলগত অংশীদারই আছি। কিন্তু আমাদের পরস্পরের সাথে সৎ হওয়া দরকার এবং সরাসরি যৌথ লক্ষ্যগুলো সত্যিকার অর্থে অনুধাবন করা দরকার।’
পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যুদ্ধের অবসান চান, কিন্তু কেউই আমাদের চেয়ে বেশি শান্তি চায় না। আমরা ইউক্রেনে যুদ্ধের মধ্যে বাস করছি। এটা আমাদের মুক্তির, আমাদের টিকে থাকার লড়াই।’
ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ওয়াশিংটনের নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিক্রিয়ায় রোববারের বৈঠকই শীর্ষ ইউরোপীয় নেতাদের সর্বশেষ রাউন্ডের বৈঠক।
ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে রাশিয়ার সাথে প্রাথমিক আলোচনায় ইউরোপকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। রোববারের আলোচনার শীর্ষ অ্যাজেন্ডা থাকবে ইউরোপের নিরাপত্তা সক্ষমতা আর হোয়াইট হাউজের কাছ থেকে যেকোনো শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি আদায় করা।
এর আগে প্যারিস সামিটের পূর্বে ইউক্রেনে ব্রিটিশ সৈন্য মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্যার কিয়ের। তবে বলেছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দরকার হবে।
শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের জন্য সরাসরি সামরিক সহায়তার বিষয়টি ট্রাম্প প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তবে তিনি ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা বলেছেন, যার আওতায় একটি খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা।
এখন শুক্রবার ওভাল অফিসে বাগবিতণ্ডার পর ট্রাম্প ইউক্রেনের সহায়তা কমিয়ে আনার কথা চিন্তা করছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
একইসাথে ইউরোপীয় নেতারা প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনী এই মুহূর্তে অতিরিক্ত সামরিক দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত নয়।
রোববার স্যার কিয়ের ও জেলেনস্কি ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন। এতে ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান এবং ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল উপস্থিত থাকবেন।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক একটি স্পেশাল প্যাকেজ ৬ মার্চ ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
ওদিকে যুদ্ধ বন্ধের কূটনৈতিক তৎপরতা সত্ত্বেও লড়াই অব্যাহত আছে। খারকিভে রাতভর ড্রোন হামলায় সাতজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। রাশিয়ায় এক রাতেই ৪৮টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র : বিবিসি