ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকে বাগ্বিতণ্ডা, চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াই ফিরে গেলেন জেলেনস্কি

ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, ‘হয় আপনি চুক্তি করবেন, নইলে আমরা এর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি।’

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকে বাগ্‌বিতণ্ডা, চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াই ফিরে গেলেন জেলেনস্কি
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স | ছবি - সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা ও খনিজসম্পদ নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করতে ওয়াশিংটন সফরে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও। কিন্তু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ বৈঠক।

এ সময় ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, ‘হয় আপনি চুক্তি করবেন, নইলে আমরা এ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি।’

পরে কোনোপ্রকার চুক্তি স্বাক্ষর করা ছাড়াই ফিরে গেছেন জেলেনস্কি।

বৈঠকের পর সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পও এ রকম আভাস দেন যে প্রস্তাবিত চুক্তিটি হচ্ছে না।

ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি বুঝতে পারছি প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি শান্তির জন্য প্রস্তুত নন কারণ তিনি মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা তাকে দরকষাকষিতে বড় রকমের সুযোগ করে দেবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে তার মর্যাদাপূর্ণ ওভাল অফিসে অসম্মানিত করেছেন। তিনি শান্তির জন্য প্রস্তুত হলে ফিরে আসতে পারেন।’

ওভাল অফিসের এ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় কয়েক ডজন মার্কিন ও ইউক্রেনীয় সাংবাদিক প্রত্যক্ষ করেন। বৈঠক শুরুর প্রায় ৪০ মিনিট পর জেলেন্সকি যখন ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের কথা উত্থাপন করেন, তখন তা তর্কাতর্কিতে পরিণত হয়।

ভ্যান্স তৎক্ষণাৎ জেলেনস্কির সমালোচনা করে তাকে ‘অপপ্রচারমূলক সফর’ আয়োজন করার জন্য অভিযুক্ত করেন।

তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, ‘আমি মনে করি ওভাল অফিসে এসে মার্কিন মিডিয়ার সামনে আপনার এই অভিযোগ তোলা অসম্মানজনক।’

ভ্যান্স ও ট্রাম্প উভয়ই ইউক্রেনের নেতাকে এই বলে অভিযুক্ত করেন যে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে তার দেশ যে সহায়তা পেয়েছে তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ নন।

জেলেনস্কি যখন পাল্টা জবাব দেয়ার চেষ্টা করছিলেন তখন ট্রাম্প উচ্চ কণ্ঠে বলেন, ‘আপনার হাতে এখন সেই তুরুপের তাস নেই। আপনি লাখ লাখ লোকের জীবন নিয়ে বাজি খেলছেন। আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে বাজি ধরছেন।’

জেলেনস্কি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন এবং পূর্বনির্ধারিত যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়।

জেলেনস্কির জবাব

এই বৈঠক আকস্মিকভাবে বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও ইউক্রেনের নেতা মার্কিন জনগণ ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের উদ্দেশে সামাজিক মাধ্যমের আশ্রয় নেন।

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক বার্তায় বলেন, ‘ধন্যবাদ যুক্তরাষ্ট্র। ধন্যবাদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস ও মার্কিন জনগণ। ইউক্রেনের প্রয়োজন ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি আর আমরা ঠিক সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’

দুর্লভ খনিজ চুক্তি

বৈঠক শুরুর আগেই ট্রাম্প জানান, তিনি জেলেনস্কির সাথে এই চুক্তি সম্পাদনের কাছাকাছি রয়েছেন। বাহ্যত বিব্রত জেলেনস্কিকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের সামনে একটি খুব ন্যায়সঙ্গত চুক্তি রয়েছে আর আমরা সেটি পাবার জন্য পথ চেয়ে আছি। আমরা খুঁড়বো আর কাজ করে যাবো এবং দুর্লভ খনিজের এর কিছুটা পাবো।’

ওই প্রস্তাবিত চুক্তিতে যৌথ মালিকানা ও ইউক্রেনের যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্নির্মাণের বিধান রয়েছে যাতে ইউক্রেন দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে ভবিষ্যতে ৫০ শতাংশ রাজস্ব পাবে।

তবে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানান যে শুক্রবার এই চুক্তিটি সম্পাদন হয়নি।

রাশিয়া ও ইউক্রেনে প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে প্রকাশ্যে এই আলোচনা ভেঙে যাওয়ায় বেশ কিছু রুশ কর্মকর্তা উল্লাস প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সহ-সভাপতি দিমিত্রি মেদভেদেভি এক্সে এক বার্তায় বলেন, ‘এই উদ্ধত মানুষটি শেষ অবধি ওভাল অফিসে যথার্থ চপেটাঘাত খেয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ’ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন। কিয়েভ সরকার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে বাজি ধরছে।’

জেলেনস্কির চিফ অফ স্টাফ, আদ্রি ইয়ারমার্ক ইউক্রেনের নেতাকে সমর্থন করেন।

ইয়ারমার্ক এক্সে এক বার্তায় বলেন, ‘আমাদের দেশের জন্য, যারা ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির পক্ষে তাদের সকলের জন্য প্রেসিডেন্ট লড়াই করছেন। এ রকম কোনো প্রকৃত নিশ্চয়তা না থাকলে, যুদ্ধ ফিরে আসবে।’

ইউরোপের প্রতিক্রিয়া

ফ্রান্স, জার্মানি, ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপীয় দেশের কর্মকর্তারা ইউক্রেনের সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি কাজা কালাস এক্সে এক বার্তায় বলেন, ‘ইউক্রেনই ইউরোপ। আমরা ইউক্রেনের সাথে রয়েছি।’

কালাস আরো বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের প্রতি আমাদের সমর্থন বৃদ্ধি করবো যাতে তারা আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াই অব্যাহত রাখতে পারে। আজ এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে মুক্ত বিশ্বের প্রয়োজন একজন নতুন নেতা। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাটা আমাদের ইউরোপীয়দের ওপরই নির্ভর করছে।’

সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা