ঈদ সামনে রেখে টুপি তৈরিতে ব্যস্ত ফুলবাড়ীর নারীরা

সুই-সুতার নিপুণ কারুকার্যে তৈরি নকশাদার টুপি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন জায়গা করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে, বিশেষ করে ইউরোপের দেশ রুমানিয়ায়।

Printed Edition
bangla-5
টুপি তৈরিতে ব্যস্ত ফুলবাড়ীর নারীরা | নয়া দিগন্ত

জাকারিয়া শেখ ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন টুপি শিল্পের সাথে যুক্ত নারীরা। সুই-সুতার নিপুণ কারুকার্যে তৈরি নকশাদার টুপি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন জায়গা করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে, বিশেষ করে ইউরোপের দেশ রুমানিয়ায়।

এই শিল্পের মাধ্যমে ফুলবাড়ীর অনেক নারী স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ঘরে বসেই তারা হাতে তৈরি টুপি তৈরি করে অর্থ উপার্জন করছেন, যা তাদের পরিবারে এনেছে স্বচ্ছলতা। ফলে শুধু অর্থনৈতিক উন্নতিই নয়, নারীদের আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফুলবাড়ী উপজেলার বালাটারী গ্রামের মায়া বেগমের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, কয়েকজন নারী সুই-সুতা হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে টুপি তৈরি করছেন। তারা এ কাজে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং নিয়মিত কাজ করছেন। বর্তমানে এই গ্রামে প্রায় ৪০ জন নারী বিভিন্ন নকশার টুপি তৈরি করছেন, যা দেশীয় বাজার ছাড়িয়ে এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। টুপি তৈরির মূল্য নির্ভর করে সাধারণত এর সূচিকর্ম ও নকশার ওপর। দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পের সাথে যুক্ত মায়া বেগম জানান, প্রতিটি টুপি তৈরিতে ৮০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পাওয়া যায়।

দুই বছর ধরে এই কাজে যুক্ত খাদিজা বেগম বলেন, আগে সংসারের খরচ চালানো খুব কষ্টকর ছিল। এখন টুপি তৈরির কাজ শেখার পর নিজের আয়টুকু সংসারের আয়ের সাথে যুক্ত করতে পারছি। মাসে দুই-তিনটি টুপি তৈরি করতে পারলে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয়, যা সংসারের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করতে পারি।

আরেক নারী উদ্যোক্তা আদরী বেগম জানান, অভাবের কারণে আগে বেশ অনেক দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো। এখন ঘরে বসে কাজ করছি। সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। এই কাজের মাধ্যমে আমি স্বাবলম্বী হতে পেরেছি। এটি আমার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

ফুলবাড়ীর এই নারীদের সাফল্যের গল্প শুধু তাদের জীবন বদলাচ্ছে না, পুরো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। তাদের হাতে তৈরি নকশাদার টুপি আন্তর্জাতিক বাজারে জায়গা করে নিয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। তাদের এই সফলতা অন্য নারীদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

নারীদের এই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে তালুক শিমুলবাড়ী ফকিরপাড়া গ্রামের বাবলু খন্দকার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার সহায়তায় অনেক নারী এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।

বাবলু খন্দকার বলেন, আমি রুমানিয়া টুপি তৈরির উপকরণ সরবরাহ করি এবং তৈরি শেষে নির্ধারিত মজুরি দিয়ে টুপি নিয়ে যাই। বর্তমানে আমার উদ্যোগের আওতায় ৮০০ নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন।

বিষয়সমূহ