সিএমজেএফ টকে বিআইএ সভাপতি
বীমাখাতে দুর্নীতি করব না, করার সুযোগ দেবো না
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটালে মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক-এ তিনি এ অঙ্গীকারের কথা জানান।

বীমাখাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। নিজে দুর্নীতি করব না, অন্যকে দুর্নীতি করতে দেবো না বলে অঙ্গীকার করেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি সাঈদ আহমদ।
তিনি বলেন, ‘বীমা আহরণের ক্ষেত্রে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটা অসম প্রতিযোগীতা চলছে। এটাকে আমরা বন্ধের জন্য নীতি-নির্ধারকদের সাথে কথা বলব। এই অসম প্রতিযোগিতা দেশের বীমাখাতকে আরো সমস্যায় ফেলবে।’
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটালে মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক-এ তিনি এসব অঙ্গীকারের কথা জানান।
সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানি ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
সাঈদ আহমদ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের বীমাখাত বৃদ্ধি পাচ্ছে না। দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ৮০টি বীমা কোম্পানির সংখ্যা আমার মতে কম। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরো সমন্বয় করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বীমাখাতের এক অসাধারণ পরিবর্তনের স্বাক্ষী আমরা। ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ, ১৯৭৩ সালে বীমা করপোরেশন আইন অনুযায়ী পুনর্গঠন, ১৯৮৪ সালে বেসরকারি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে অন্তর্ভূক্তিকরণ। প্রতিটি ধাপ এই খাতকে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের দেশে ৮০টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। ৩৫টি জীবনবীমা এবং ৪৫টি সাধারণ বীমাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা সম্মিলিতভাবে প্রায় ১.৮৯ কোটি ব্যক্তিকে বীমার আওতায় এসেছে। কিন্তু এতো অগ্রগতির পরেও বাংলাদেশে ইন্সুরেন্স’র অবদান জিডিপির ০.৫ শতাংশ।’
তিনি আরো বলেন, ‘যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক কম। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চার শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১.২ শতাংশ, পাকিস্তানে ০.৮ শতাংশ।’
বিআইএ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের বীমা খাতে বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে। যেমন কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ের পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বব্যাপী, দেশের অর্থনীতির অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নেতিবাচক রিজার্ভ ইত্যাদির কারণে বীমা খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।’
বীমাখাতের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্য থেকেও বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলো জীবন বীমাখাতে প্রাইভেট বীমা কোম্পানিগুলোর উপার্জিত প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল ২০২৩ সালে ১১ হাজার ৪,৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বেসরকারি জীবন বীমাখাতের লাইফ ফান্ড ২০২৩ সালে ৩২ হাজার ১,৫৩ কোটি টাকা। বেসরকারি জীবন বীমাখাতে ২০২৩ সালের বিনিয়োগ ৩৬৮,৫৩৬ মিলিয়ন টাকা। বেসরকারি খাতে জীবন বীমা কোম্পানির মোট সম্পদ ২০২৩ সালে ৪৪ হাজার ২,২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বীমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ২০২৩ সালে ছিল চার হাজার ২,৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বীমা কোম্পানির ২০২৩ সালে সম্পদের পরিমাণ ১১ হাজার ৬৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বীমা খাতে ২০২৩ সালের বিনিয়োগ পাঁচ হাজার ৭,৭২ কোটি টাকা।
এই খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা তুলে ধরে সাঈদ আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্পায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং গড় আয়ু বৃদ্ধির পরেও আমাদের ইন্স্যুরেন্স শিল্প এখনো তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারেনি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। এর মধ্যে বীমা সচেতনতা ও সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা এখনো বীমার গুরুত্ব ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এর ভূমিকা পুরোপুরি বোঝে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নীতিমালার সংস্কার চলমান থাকলেও, কার্যকারিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে আরো সমন্বয় প্রয়োজন। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে, গ্রাহকদের আরো সহজে বীমার আওতায় আনা প্রয়োজন। বিশ্বাসের অভাব ও দ্রুততম সময়ে দাবি নিষ্পত্তি, স্বচ্ছতা এবং উন্নত সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে হবে।’
বর্তমান বীমাখাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বীমার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি, সময়মত সকল প্রকার দাবি পরিশোধ, এনজিও কর্তৃক বীমা করার অধিকার রহিতকরণ, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের জীবনবীমা পলিসি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব, বীমা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন, ভ্যাট/ট্যাক্স সংক্রান্ত সমস্যাবলীর সমাধান, মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামুলককরণ, বেসরকারি খাতে পুনঃবীমা কোম্পানি গঠন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে ভ্যাট, দ্বৈতকর ও করহার হ্রাসকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পতির বীমা করা বাধ্যতামূলক করণ। তবে, প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সম্ভাবনা থাকে। নতুন উদ্ভাবন, নীতিমালা সংস্কার এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব কাজে লাগিয়ে আমরা বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স শিল্পের প্রকৃত সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে পারব।’
প্রশ্নের জবাবে সাঈদ আহমদ বলেন, ‘বীমা কোম্পানি সেবামূলক কাজ করছে। সেখানে তারা সেবার নামে কেন টাকা নেবে, এটা হতে দিতে পারি না। সেবার নামে বাণিজ্য করবেন তা হতে দেবো না।’
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণের টাকা তছরুপ করবে ছিনিমিনি খেলবে বিআইএ তা হতে দেবে না। আমরা তা মানব না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করব। কয়েকটি সংস্থার জন্য পুরো খাত প্রশ্নের মুখে পড়বে এটা হতে দেবো না।’
তিনি বলেন, ‘এই খাতের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা বেশি। কারণ এই খাতের উন্নয়নে পলিসি করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার যদি বাধ্যতামূলক করে দেয় তাহলে খাতটির বিকাশ ঘটবে এবং জিডিপিতে অবদান বাড়বে।’