হামিদুর রহমান আযাদ
লবণ শিল্পকে বাঁচাতে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে
‘অবিলম্বে কার্যকরী লবণ বোর্ড এবং লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট গঠন করে মূল্য ও মান নিশ্চিত করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে লবণের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।’

লবণ শিল্পকে বাঁচাতে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, অবিলম্বে কার্যকরী লবণ বোর্ড এবং লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট গঠন করে মূল্য ও মান নিশ্চিত করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে লবণের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।
শনিবার (৮ মার্চ) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহেশখালী-কুতুবদিয়া ফোরামের উদ্যোগে কৃষক ও ভোক্তা পর্যায়ে ‘লবণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, লবণ চাষীদের ন্যায্য অধিকার আদায়, দেশের প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাহিদা দেখিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট কর্তৃক অপ্রয়োজনীয় লবণ আমদানি নিষিদ্ধকরণ, কার্যকরী লবণ বোর্ড গঠনসহ লবণ শিল্পকে বাঁচনোর দাবিতে সমাবেশ ও মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
লবণ চাষীদের ১২ দফা ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘লবণের কৃষক ঠকে মাঠে আর ভোক্তারা ঠকে হাটে। যেই লবণ চাষী কেজিপ্রতি বিক্রি করে পাঁচ বা ছয় টাকা সেই লবণ আমাদের খুচরা বাজার হতে ক্রয় করতে হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। অবিলম্বে লবণের সর্বনিন্ম ও সর্বোচ্চমূল্য নির্ধারণ করতে হবে।’
সংগঠনের আহ্বায়ক এ এম শহীদুল এমরানের সভাপতিত্বে সমাবেশ ও মানববন্ধনে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন আব্দুস সুক্কুর, সাবেক সিআইপি জয়নাল আবেদীন, সাবেক মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন, কক্সবাজার জেলা লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাকের হোসেন, আমির খসরু, সহিদুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মঈনুদ্দিন জাহাঙ্গীর, শিক্ষাবিদ মো: নাছির উদ্দীন, মাসুদুর রহমান, কবি মনির ইউসুফ, মুসলিম উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশরাফ উল্লাহ খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ হাসনাত শুভ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘প্রায় ৯৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজার জেলায় মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, পেকুয়া, চকরিয়া উপজেলায় এবং অবশিষ্ট পাঁচ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। গত মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় দেশীয় উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি অর্থবছরে আরো দু’ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া ভালোভাবেই চলছে। প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয়, যা ক্রমান্বয়ে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশীয় লবণ শিল্পের সাথে ৬৫ হাজার চাষিসহ ১০ লাখ মানুষ লবণ শিল্পের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত।’
লবণ চাষীদের দাবি, মাঠ পর্যায়ে লবণের উৎপাদন ভালো থাকা সত্ত্বেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন । মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে লবণ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা। অথচ এক মণ লবণের উৎপাদন খরচ ৩০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।
‘লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের নাম দিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে।’
‘যদি লবণ চাষীদের যুক্তিসঙ্গত দাবি মেনে নেয়া না হয় তাহলে আগামীতে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।’
এ সমাবেশ ও মানববন্ধনে কক্সবাজার জেলার প্রান্তিক অঞ্চলের লবণ চাষী, লবণ ব্যবসায়ী, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।