একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অসহায় শহীদ ইয়াসিনের মা

৫০ বছর বয়সী মঞ্জিলা সন্তানদের জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি কাগজের কারখানায় কাজ করতেন। ভয়াবহ কষ্ট সত্ত্বেও তিনি তার মেয়েদের বিয়ে দেন এবং একমাত্র ছেলের ওপর ভরসা রেখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু একটি গুলি তার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।

নয়া দিগন্ত অনলাইন
শহীদ ইয়াসিন শেখ
শহীদ ইয়াসিন শেখ | ছবি : সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানে ১৭ বছর বয়সী গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ-কর্মী ইয়াসিন শেখ শহীদ হওয়ায় তার মা মঞ্জিলা বেগম মানসিক ও আর্থিকভাবে নিদারুণ অসহায়ত্বের মধ্যে পড়ে গেছেন।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ইয়াসিন। ২০২৪ সালের ২১ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার চার দিন পর ২৫ জুলাই মৃত্যু হয় তার।

ইয়াসিনের জীবন শৈশব থেকেই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কেটেছে। তার বাবা নূর ইসলাম ১৬ বছর আগে মারা যান। তখন মাত্র এক বছরের ইয়াসিন ও তার তিন বড় বোনকে একা লালন-পালন করতে হয় মঞ্জিলা বেগমকে।

৫০ বছর বয়সী মঞ্জিলা সন্তানদের জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি কাগজের কারখানায় কাজ করতেন। ভয়াবহ কষ্ট সত্ত্বেও তিনি তার মেয়েদের বিয়ে দেন এবং একমাত্র ছেলের ওপর ভরসা রেখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু একটি গুলি তার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কদমতলীর গ্যাস রোড এলাকার ভাড়া করা টিনশেড ঘরে গিয়ে এই প্রতিবেদক যখন তার শহীদ ছেলের কথা জানতে চান, তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন মঞ্জিলা।

ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিনটির কথা স্মরণ করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে সকাল ৯টায় গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে কিছু ছেলে এসে জানায়, ইয়াসিন গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং তাকে শনির আখড়ার এক চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, সেসময় কেউই তাকে সহায়তা করতে সাহস পাচ্ছিল না, কারণ আহতদের সাহায্য করলে পুলিশ হয়রানি করছিল।

অবশেষে, দুই যুবকের সহায়তায় মঞ্জিলা ইয়াসিনকে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চার দিন পর ২৫ জুলাই সকালে তিনি মারা যান।

ছেলের লাশ পেতে যে হয়রানির শিকার হয়েছেন, তা স্মরণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মঞ্জিলা বলেন, ‘সেই দিন রাত ২টা পর্যন্ত পুলিশের নিয়মকানুনের দোহাইয়ের কারণে আমরা লাশ পাইনি।’

তিনি বলেন, বিভিন্ন থানায় তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। ঘটনাস্থল তাদের এখতিয়ারে পড়ে না বলে কেউ দায়িত্ব নিতে চায়নি।

‘শেষ পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা রাত ২টার দিকে মুগদা মেডিক্যালে গিয়ে আমার ছেলেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যান,’ বলেন শোকার্ত মঞ্জিলা।

২৬ জুলাই ইয়াসিনের লাশ খুলনার নাইহাটী উপজেলার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মঞ্জিলা বলেন, তিনি সম্প্রতি তাদের বর্তমান দুই রুমের বাড়িতে উঠেছিলেন শুধুমাত্র তার ছেলের ভালো জীবনের আশায়।

সূত্র : বাসস