হাইকোর্টের রায়
এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া নামের আগে ডাক্তার পদবি নয়
মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের এমন বিধান প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
স্থান
ঢাকা

ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবি লিখতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের এমন বিধান প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
বুধবার (১২ মার্চ) বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি সাথীকা হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।
এ পর্যন্ত যারা এ পদবি ব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নয় বলেও রায়ে বলেছেন হাইকোর্ট।
আদালত আরো বলেছেন, আইন ভঙ্গ করে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করলে এখন থেকে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের এমন বিধান প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়। ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রিধারীদের নামের আগে ডাক্তার ব্যবহারকে কেন্দ্র করে আইনটির বৈষম্যমূলক প্রয়োগ নিয়ে এক যুগ আগে করা অপর রিটেরও শুনানি শেষে হয়েছে।
পৃথক দু’টি রিটের ওপর একসাথে শুনানি শেষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চ রায়ের জন্য আজ ১২ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন হয়। ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রিধারীদের (ডিপ্লোমাধারী হিসেবে নিবন্ধিত) ক্ষেত্রে আইনটির বৈষম্যমূলক প্রয়োগের অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন আহ্বায়ক শামসুল হুদাসহ অন্যরা ২০১৩ সালে একটি রিট করেন। ওই আইনের ২৯ ধারার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিক্যাল অ্যাসোসিশনের সভাপতি ও সেক্রেটারি গত বছর অপর একটি রিট করেন।
প্রথম রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালের ১১ মার্চ হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। দ্বিতীয় রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে আইনের ২৯ ধারা কেন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর একসাথে শুনানি হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন শুনানি করেন। এছাড়া প্রথম রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো: সাইদুর রহমান।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম সাইফুল করিম শুনানি করেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের পক্ষে আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম শুনানি করেন।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি প্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না, আইনের ২৯ ধারার বৈধতা নিয়ে একটি রিট করা হয়। আর নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করার কারণে ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) ডিগ্রিধারী নিবন্ধিতদের হয়রানি করার অভিযোগ তথা আইনের বৈষম্যমূলক প্রয়োগ নিয়ে এর আগে আরেকটি রিট হয়। দু’টি রিটের ওপর একসাথে চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ১২ মার্চ দিন ধার্য করেন।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২৯(১) ধারার ভাষ্য, এই আইনের অধীন নিবন্ধন করা কোনো মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোনো নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যার ফলে তার কোনো অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে বলে কেউ মনে করতে পারে, যদি না তা কোনো স্বীকৃত মেডিক্যাল চিকিৎসা-শিক্ষা যোগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসা-শিক্ষা যোগ্যতা হয়ে থাকে।
ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ব্যতীত অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। ২৯ (২) ধারার ভাষ্য, কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং সে জন্য তিনি তিন (তিন) বছর কারাদণ্ড বা এক (এক) লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডণীয় হবেন এবং ওই অপরাধ অব্যাহত থাকলে প্রতিবার এর পুনরাবৃত্তির জন্য অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বর্ণিত দণ্ডের অতিরিক্ত হিসাবে, দণ্ডণীয় হবেন।