সমাবেশে জাবি শিক্ষার্থীরা
শাহবাগ থেকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল
জাবি প্রতিনিধি
শাহবাগীদের মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

‘আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী বানানোর অন্যতম খলনায়ক এই শাহবাগীরা। তারা শাহবাগ কায়েমের মাধ্যমে মব কালচার ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। এই চক্রটি আবার সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে।’ তাদেরকে মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাত ২টায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন।
এর আগে, রাজধানীতে পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক লাকি আক্তারসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের গ্রেফতারের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন একদল শিক্ষার্থী। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে শুরু হয়ে হলগুলো প্রদক্ষিণ করে আবার বটতলায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, শাহবাগ নো মোর’, ‘ল তে লাকি, তুই হাসিনা তুই হাসিনা,’ ‘আমার ভাই কবরে,’ ‘আমার সোনার বাংলায় শাহবাগের ঠাঁই নাই,’ ‘শাহবাগ না জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস,’ ‘সারা বাংলায় খবর দে, শাহবাগের কবর দে,’ ‘শাহবাগী শাহবাগী, বিচার তোরা পাবি পাবি,’ ‘শাহবাগী হামলা করে, ইন্টেরিম কী করে’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী বানানোর অন্যতম খলনায়ক এই শাহবাগ প্রতিষ্ঠাকারীরা। এখন তারা তাদের সেই দোসরদের পুনর্বাসন করতে সচেষ্ট। দেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা প্রতিবেশী দেশের দালালী করছে। এই চক্রটি আবার সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আসার আগে এই মুহূর্তে তারা বাংলাদেশকে বিশৃঙ্খল করতে নানা অজুহাত খুঁজছে। অবিলম্বে এই বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে গণহত্যায় বিচার ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও গণজাগরণ মঞ্চের স্লোগান কন্যাখ্যাত লাকী আক্তারের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আঞ্জুম শাহরিয়ার বলেন, বাংলাদেশে শাহবাগ কায়েমের মাধ্যমেই মব জাস্টিসের সূচনা হয়েছিল। আমাদের ভাইদেরকে তাজা রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছিল। এই দেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পুনরায় সেই মব জাস্টিস করতে চায় তাহলে ছাত্র-জনতা তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করবে। সন্ত্রাসী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী সকল সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে। যখন ইন্টেরিম সরকার একটি বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন আন্দোলন করে দেশে অস্থিরতা তৈরি দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা দেশকে বিদেশী অপশক্তির হাতে তুলে দিতে চাচ্ছে। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আজকে যে মব কায়েম করা হয়েছে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে শাহবাগের হাত ধরে এ দেশে স্বৈরাচার জন্ম লাভ করে। একইসাথে শাপলার গণহত্যাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। আজ ২০২৫ সালে এসে সেই পতিত স্বৈরাচারের দোসরেরা নতুন করে শাহবাগ কায়েম করতে চায়। আমরা এদেশের ছাত্র-জনতা নতুন কোনো স্বৈরাচার এদেশে জন্মাতে দেব না। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গঠনে দল, মত, ধর্ম নির্বিশেষে কাজ করে যাবো। শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এই শপথ নিতে চাই যে, শহর থেকে গ্রামে সকল জায়গায় যেখানেই স্বৈরাচারের দোসরের দেশবিরোধী চক্রান্ত দেখবো সেখানেই ছাত্র-জনতা কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ।
কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আলি জাকি শাহরিয়ার বলেন, আমরা জানি কীভাবে এই শাহবাগীরা ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। আমরা জানি তারা কীভাবে ফ্যাসিস্টদের ‘বি’ টিম হিসেবে কাজ করেছে। আমরা এটাও দেখেছি দেশে কীভাবে বিচারিক হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। বড় অবাক হই ২৪ পরবর্তী সময়ে এসে এই লাকি আক্তার কীভাবে অবাধ বিচরণ করে বেড়ায়। আমরা শিক্ষার্থীসহ আপামর জনতা এই শাহবাগীদের বিচার চাই। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যতদিন না এই শাহবাগীদের মূলোৎপাটন হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।
গণিত বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর বলেন, এই শাহবাগের উৎথান ইসলাম বিদ্বেষ ও ভারতীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। এই শাহবাগ আমাদের ভাইয়ের রক্ত রঞ্জিত করেছে। জুলাই আন্দোলনের পর আমরা ভেবেছিলাম তারা শুধরাবে, কিন্তু তারা শুধরায়নি। তাদেরকে আমরা রাজপথে মোকাবেলা করবো। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীনগরের আন্দোলনকেও তারা বানচাল করতে চেয়েছিলো। আমরা বলতে চাই, ২৪-এর চেতনাকে ধারণ করে, শহীদদের রেখে যাওয়া স্বপ্নকে লালন করে, শাহবাগের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবো।