চীনা রাষ্ট্রদূত
চীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী
সেমিনারে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের আগে বাংলাদেশকে সকল করযোগ্য পণ্যের উপর শূন্য-শুল্ক সুবিধা প্রদানের চীনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

চীন বাংলাদেশের টেক্সটাইল, ক্লিন এনার্জি, ইলেকট্রিক যানবাহন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ঢাকায় এক সেমিনারে তিনি দু’ দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য বেইজিংয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ইয়াও ওয়েন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের আগে বাংলাদেশকে সকল করযোগ্য পণ্যের উপর শূন্য-শুল্ক সুবিধা প্রদানের চীনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আরো চীনা কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে, ১৪টি চীনা সংস্থা ইতিমধ্যে দেশে মোট ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস আয়োজিত এই সেমিনারে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গতিশীলতা নিয়ে আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির সাবেক রেক্টর মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন এবং স্বাধীন গবেষক সৈয়দ শাহনাওয়াজ মহসিন উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও উভয় দেশকে চীন-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ক্রমবর্ধমান রূপ তুলে ধরার জন্য একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের একটি প্রাণবন্ত ও আবেগপূর্ণ গল্প বলি এবং আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব যাতে আরো বাস্তব ফলাফল বয়ে আনে তা নিশ্চিত করি।’
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ক জনগণ কেন্দ্রিক।
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি চীনে প্রথম দফায় বাংলাদেশী রোগী ও চিকিৎসক পাঠানোসহ নতুন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
ইয়াও বলেন, ‘বাংলাদেশী জনগণ চীনে ভ্রমণ, পড়াশোনা এবং ব্যবসা করার প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দু’ দেশের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ৫৮টি সরাসরি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে এবং চীন বাংলাদেশী নাগরিকদের ভ্রমণের সুবিধার্থে সুশৃঙ্খল ভিসা পদ্ধতি চালু করেছে।’
চীনের সাথে নিবিড় সম্পৃক্ততার জন্য বাংলাদেশীদের ক্রমবর্ধমান উৎসাহের সাথে ইয়াও মানুষে মানুষে বিভিন্ন বিষয় বিনিময় জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই অ্যাকাডেমিক গবেষণা, সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া এবং ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে হবে।’
সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার গুরুত্বর ওপর জোর দেন।
আলোচনায় আঞ্চলিক কূটনীতিতে চীনের ভূমিকা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সঙ্কটে চীনের জড়িত থাকার বিষয়টিও তুলে ধরা হয় এবং আরো সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানানো হয়।
সেমিনারে সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস টানা তিন বছর ধরে ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সাক্ষাৎকার নেয়া ৯৯ শতাংশ মানুষ চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অনুমোদন ও সমর্থন করেন, যা ঐকমত্যের ব্যাপকতা প্রদর্শন করে।
২০২২ সালে প্রায় ৬০.১ শতাংশ বাংলাদেশী চীন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেছিলেন, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৬৬.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
২০২২ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ বাংলাদেশী চীনের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়।
সূত্র : বাসস