সাতকানিয়ায় জামায়াতকর্মী হত্যা : ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাতের গুজব রটিয়ে জামায়াতের দুই কর্মীকে ‘মব’ সৃষ্টি করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার ছয়দিন পরে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাতের গুজব রটিয়ে জামায়াতের দুই কর্মীকে ‘মব’ সৃষ্টি করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার ছয়দিন পরে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
রোববার (৯ মার্চ) নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী আরজু আক্তার সাতকানিয়া থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখসহ ১০ থেকে ১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত সোমবার (৩ মার্চ) রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গণপিটুনির নামে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল।
নিহতরা হলেন- জামায়াতকর্মী মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৩) ও আবু ছালেক (৩৮)। এ ঘটনায় স্থানীয় এক দোকানিসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
মামলায় এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলাম মানিককে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে এবং তার তিন ভাই মো: হারুন, মো: মমতাজ ও মো: কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আবু ছালেক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী এবং ২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে মামলা-হামলা ও জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর আবু ছালেক বাড়িতে ফিরে আসেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছনখোলায় আব্দুল নুর নামের এক ব্যক্তির একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় আব্দুল নুর, আবু ছালেক ও তার বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে অবহিত করেন। পরে ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ছনখোলা এলাকায় আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিন অটোরিকশা পোড়ানোর বিষয়ে একটি সালিশি বৈঠক করেন। ওই সালিসি বৈঠকে আব্দুল নুরের গাড়িতে কারা আগুন লাগিয়েছেন শনাক্ত হয় এবং শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭ লাখ টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়।
এজাহার সূত্রে আরো জানা যায়, আব্দুল নুর ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সন্তুষ্ট হননি। তাই মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন ৩ মার্চ রাত সাড়ে নয়টার দিকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সমাধানের কথা বলে আবু ছালেক ও তার বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে সালিশি বৈঠক চলাকালে মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে মারধর শুরু করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ছনখোলা পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়। পরে অভিযুক্ত লোকজন আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে স্থানীয় একটি চায়ের দোকান থেকে বের করে এনে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেন। এরপর মামলার এক নম্বর আসামি পুলিশের উদ্ধার করা পিস্তলটি নেজাম উদ্দিনের লাশের পাশে রেখে পালিয়ে যান।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জাহেদুল ইসলাম জানান, এওচিয়ার ছনখোলায় গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় আজ রোববার থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী আরজু আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।