সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ
ধর্ষণচেষ্টার কারণে হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে খুন
রোজার আগের দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমান ভূঁইয়ার সাথে গ্রেফতার মো: নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাধে সাইফুর তার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান দম্পতিকে। একপর্যায়ে সাইফুর রহমান রুপাকে তার ফ্ল্যাটে আটকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের রাতে এক বেডে ছিলেন নিহত সাইফুর রহমান ও দম্পতি রুপ ও নাজিম।

রাজধনীর উত্তরখান থানাধীন পুরান পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া (৫০) হত্যাকাণ্ডে এক তরুণী ও তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাসায় জোরপূর্বক আটকে রেখে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা ও নির্যাতন করে আসছিলেন সাইফুর রহমান। এরপর তারা রাগে-ক্ষোভে এবং ধর্ষণচেষ্টা থেকে বাঁচতে ধারাল বটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন তাকে।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো: মহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, টাকা-পয়সা রাখার ব্যাগ হারিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে অসহায় অবস্থায় পড়েন এক দম্পতি। তাদের দুজনেরই বয়স ২৫-এর কম। তাদের অসহায়ত্ব দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া। দুজনকে বাসায় চাকরি দেয়ার কথা বলে নিয়ে যান তার উত্তরখানের ভাড়া বাসায়। চাকরির কথা বলে নিলেও সাইফুর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল ওই নারীর সাথে ‘আপত্তিকর আচরণ’ করা। সুযোগ পেলেই যুবককে বাইরে পাঠিয়ে তার স্ত্রীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন সাইফুর রহমান।
তিনি আরো বলেন, সবশেষে গত রোববার রাতে তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা করলে তার স্বামী প্রতিবাদ করেন, ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে বটি দিয়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান ওই দম্পতি। পরে ১১ মার্চ ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার দম্পতি হলেন মো: নাজিম হোসেন (২১) ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতি (২৩)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দু’টি মোবাইল ফোন, একটি চাবির রিং ও একটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়। এর আগে নিহতের ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারাল বটি, একটি ধারালে চাকু ও রক্ত মাখা জামা-কাপড় এবং বিছানার চাদর উদ্ধার করে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জব্দ করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো: মহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১০ মার্চ রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া উত্তরখান থানার পুরানপাড়া বাতান এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলার ছয়তলা ফ্ল্যাটে খুন হন। এ খুনের ঘটনায় তার ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভূঁইয়া উত্তরখান থানায় ১১ মার্চ একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে নিহতের ভাই উল্লেখ করেন, নিহত সাইফুর উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় তার স্ত্রীর পৈত্রিক আড়াই শতক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য গত ৩-৪ মাস ধরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। যেখানে ঘটনাস্থল তার সামনেই এই জায়গাটি।
গ্রেফতার দম্পতিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে উত্তরার ডিসি মহিদুল ইসলাম জানান, রোজার আগের দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমান ভূঁইয়ার সাথে গ্রেফতার মো: নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতির পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাধে সাইফুর তার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান দম্পতিকে। একপর্যায়ে সাইফুর রহমান রুপাকে তার ফ্ল্যাটে আটকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের রাতে এক বেডে ছিলেন নিহত সাইফুর রহমান ও দম্পতি রুপ ও নাজিম। সেই রাতে নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে সাইফুর রহমান রূপাকে ধর্ষণচেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নাজিম ঘুম থেকে জেগে গেলে রান্নাঘর থেকে বটি এনে সাইফুর রহমানকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকেন। আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেফতারদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত সাইফুর রহমানের সাথে তার স্ত্রীর কোনো বিরোধ ছিল কিনা জানতে চাইলে ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘থাকতে পারে। তদন্তের জন্য তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে সে ধরনের কোনো তথ্য আমরা পাইনি।’
মেয়েটিকে ধর্ষণচেষ্টার কারণে দম্পতি সাইফুর রহমানকে হত্যা করেছে, মামলাটি কোন পর্যায়ে যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিশ্চতভাবে এটি হত্যা মামলা। আদালতে মামলাটি যখন ট্রায়াল হবে তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের পরবর্তীতে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।’