আমীর খসরু
সাংবাদিকরা জনগণের সামনে সঠিক চিত্র তুলে ধরেছে
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে হাজারো সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। তাই রাজনীতিতের সহনশীলতা থাকতে হবে। ভিন্ন মত থাকলেও অপরপক্ষকে সম্মান জানাতে হবে। এটাই হবে বিএনপির রাজনীতি, তারেক রহমানের রাজনীতি। এ রাজনীতি নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’

চট্টগ্রাম ব্যুরো
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকরা জনগণের সামনে সঠিক চিত্র তুলে ধরেছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে গণতন্ত্রের যে সংগ্রাম চলছে, সেটিকে সফল করার জন্য, জনগণের মালিকানা, নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেলে নগরীর চট্টগ্রাম ক্লাবে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) এর দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে হাজারো সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। তাই রাজনীতিতের সহনশীলতা থাকতে হবে। ভিন্ন মত থাকলেও অপরপক্ষকে সম্মান জানাতে হবে। এটাই হবে বিএনপির রাজনীতি, তারেক রহমানের রাজনীতি। এ রাজনীতি নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’
দেশের মানুষ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মূল স্তম্ভ হচ্ছে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনা। গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার একমাত্র পথ। আর তার বাহক হচ্ছে, দেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি, নির্বাচন। দেশের মানুষ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে।’
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূইয়া। এ সময় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক শামসুল হক হায়দরী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘এখন সুযোগ এসেছে দেশকে এগিয়ে নেয়ার। দেশকে একটি স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। নির্বাচন অবশ্যই হবে, তার আগে সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় সংস্কার। সংস্কারের মাধ্যমে দেশকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যাতে ফ্যাসিবাদ কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দলকে ইস্পাতকঠিন ঐক্য ধারণ করতে হবে। কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদকে ঘুরে দাঁড়াতে দেয়া যাবে না। মনে রাখবেন, ফ্যাসিবাদ ঘুরে দাঁড়াতে পারলে এর দায় কেউই এড়াতে পারবেন না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা: শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দেশের জনগণ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। জনগণ এখন গণতন্ত্র, সুশাসন ও মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। তাই জাতীয় নির্বাচনই হবে জনগণের প্রতিনিধি নির্ধারণের একমাত্র পথ। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে দেশনায়ক তারেক রহমানের ৩১ দফা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, ‘মিনিমাম সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া সঠিক হবে না। সাংবাদিকদের বিবেকের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে। অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা, তথ্য সন্ত্রাস পরিহার করে সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে। সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। সংবাদ মাধ্যমের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা।’
ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে অনেক সংবাদমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশ করে যা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা অনেক সময় নিজেদের কাজের যথার্থতা প্রমাণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। গুজব, মিথ্যা তথ্যে সমাজ তথা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের আরো সচেতন হতে হবে।’
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হলেও, এটি এখন বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সামনে যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ পেশার স্বাধীনতা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনি ও ক্ষমতামুখী সাংবাদিকতা সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় সৃষ্টি করছে। তাই সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় প্রেস ক্লাব সেক্রেটারি আইয়ুব ভূইয়া প্রয়োজনীয় সংস্কারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।’
এ সময় আরো বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ হাসিব আজিজ, নয়া দিগন্তের অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক ও বিএফইউজে সহ-সভাপতি খাইরুল বাশার, বিএফইউজের দফতর সম্পাদক আবু বকর, সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো: নুরুল করিম, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মানজারে খোরশেদ আলম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, হেফাজতে ইসলাম নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, দৈনিক কর্ণফুলী সম্পাদক আফসার উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, উত্তর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আলাউদ্দিন সিকদার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।