নারীকর্মীদের ওপর হামলা
ঝিনাইদহে বিএনপি-জামায়াতের ভুল বোঝাবুঝি প্রকাশ্যে
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা বলেন, ‘জামায়াতের সাথে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। তৃণমূলে যা ঘটছে সেটা হয়ত ভুল বোঝাবুঝি। একটি মহল আমাদের মধ্যে বিবাদ বা অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’

আলাউদ্দীন আজাদ, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের মহেশপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামায়াতের নারীকর্মীদের ওপর বিএনপিকর্মীদের হামলার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ভুল বোঝাবুঝি প্রকাশ্যে এসেছে।
এ ঘটনায় দল দু’টি ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এক দল অন্য দলের নেতাকর্মীদের দোষারোপ করছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলে ফ্যাসিস্টরা ঢুকে বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দল দু’টির শুভাকাঙ্খাীরা। রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে ছাত্রদের পাশে থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া দল দু’টির এমন অবস্থান ভালোভাবে নিতে পারছেন না এলাকার সাধারণ জনতা।
গত শনিবার (৮ মার্চ) ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের কুল্লোপাড়া গ্রামে জামায়াতের নারীকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের দোষারোপ করে মহেশপুর থানায় মামলা করেন জামায়াতের নারীকর্মী হাসিনা খাতুন।
জামায়াতের অভিযোগ, ওই দিন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের কুল্লোপাড়া গ্রামের খায়রুল ইসলামের বাড়িতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সভা চলাকালে স্থানীয় হায়াত আলীর ছেলে ঝুমুর, ওমর আলীর ছেলে আল আমিন, আব্দুল কাদেরের ছেলে সোহেল হোসেন, আব্দুল লতিফের ছেলে সাহেব আলী ও ফকির মিয়ার ছেলে আশরাফুলের নেতৃত্বে কয়েকজন হামলা চালালে আহত হন হাসিনা খাতুন নামে এক জামায়াতকর্মী। বিষয়টি উপজেলা থেকে দলের শীর্ষ নেতাদের নজরে আসে।
প্রতিবাদে মহেশপুরের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক নারী সমাবেশ করতে থাকে জামায়াত। মঙ্গলবার দুপুরেও মহেশপুর সরকারি কলেজ মাঠে মহিলা জামায়াতের নারী কর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। শমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হুসাইনসহ জেলা ও উপজেলা নেতারা। এতে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে জামায়াতে ইসলামীর নারী কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার সোহেল হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা সোহেল হোসেন মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের কুল্লোপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে ও স্থানীয় বিএনপি সমর্থক।
এদিকে মহেশপুর উপজেলা বিএনপিও এ ঘটনাকে অপপ্রচার দাবি করে এর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এ ঘটনার সাথে বিএনপি জড়িত নয় বলে দাবি করেছে। বুধবার উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদে সমাবেশে এ ঘটনাকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা অবিহিত করে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অপপ্রচার দাবি করে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহদি হাসান রনির সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল। এছাড়া জেলা ও উপজেলা নেতারা বক্তব্য দেন।
এদিকে ভিজিএফ কার্ড বণ্টনে অসচ্ছতার অভিযোগ এনে সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদে চড়াও হয় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। আবার বাজার কমিটি গঠন নিয়ে সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিতদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এভাবে প্রায় সারা জেলার তৃণমূলে কমবেশি মতানৈক্য সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা বলেন, ‘জামায়াতের সাথে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। তৃণমূলে যা ঘটছে সেটা হয়ত ভুল বোঝাবুঝি। একটি মহল আমাদের মধ্যে বিবাদ বা অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আওয়াল জানান, ‘রাজপথে আমরা ফ্যাসিবাদ শক্তিকে হটিয়েছি। বিএনপির সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। তৃণমূলে ফ্যাসিস্টরা বিভিন্ন দলে ঢুকে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে মনে করেন তিনি।’
তবে ঝিনাইদহের তৃণমূলে মতবিরোধ এমনকি হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত বিএনপি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতারাও জড়িয়ে পড়ছে বক্তব্য বিবৃতিতে। আলোচিত দল দু’টির নেতাকর্মীদের এমন কর্মকাণ্ডে অনেকটাই বিব্রত ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনসাধারণ। তারা মনে করেন, দল দু’টি ফ্যাসিবাদ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকুক।